![]() |
| ঢাকা হাইকোর্ট সামনে প্রতীকী অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন |
আদালতের মাধ্যমে সিএইচটি রেগুলেশন ১৯০০ বাতিলসহ রাজা-হেডম্যান-কার্বারি পদবি বিলোপ এবং পাহাড়িদের প্রথাগত অধিকার হরণের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ঢাকায় হাইকোর্টের সম্মুখে প্রতীকী অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ)।
আজ মঙ্গলবার (১৪ মে ২০২৪) সকাল সাড়ে ১১টায় হাইকোর্টের গেইটে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি জিকো ত্রিপুরা, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা ও সাবেক সভাপতি সুনয়ন চাকমা। এসময় সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাওফিকা প্রিয়া।
জিকো ত্রিপুরা বলেন, রাষ্ট্রের বিভিন্ন কুচক্রী মহল পাহাড়িদের প্রথাগত আইন অর্থাৎ রাজা-হেডম্যান-কার্বারি পদবি বিলুপ্ত করার মাধ্যমে পাহাড়ি জনগণের প্রথাগত অধিকার হরণের ষড়যন্ত্র করছে। এর প্রতিবাদে আমরা হাইকোর্টের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতীকী অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করছি। এই অবস্থান ধর্মগত কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯০০ সালের শাসন বিধি বহাল রাখার দাবি জানাচ্ছি। এছাড়াও বান্দরবান সহ পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক পাহাড়ি জনগণের উপর নিপীড়ন নির্যাতন বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।
অমল ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম একসময় স্বাধীন ও স্ব-শাসিত অঞ্চল ছিল। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা ১৮৬০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের আধিপত্য বিস্তার করলে পাহাড়িরা তাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলতে শুরু করে। ব্রিটিশ আমলে ১৯০০ সালে ৬ জানুয়ারি এক আইন জারি করা হয়। যার নাম ছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০। এই আইনে পাহাড়ির নিজস্ব শাসনবিধি ও প্রথাগত ভূমি অধিকারসহ ইত্যাদি উল্লেখ রয়েছে। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশরা চলে গেলে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হয়। পাকিস্তান সরকার ১৯৫৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের এই আইন সংশোধন করে। একই সাথে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরও বিভিন্ন সরকার এই আইন সংশোধন করে মৌলিক বিষয়গুলোকে বাদ দিয়েছে। বর্তমান অবধি ১৯০০ সালের আইনে যতটুকু পাহাড়িদের প্রথাগত আইনের অধিকার রয়েছে তাও বাতিল করার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৯০০ সালের শাসন বিধি বহাল রাখার দাবিতে গত কয়েকদিনে পার্বত্য চট্টগ্রামে ছাত্র-যুব-নারীসহ শত শত জনগণ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে। আগামীকাল ১৫ মে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলায় পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিভ ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) অর্ধ দিবস সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষনা দিয়েছে। পাহাড়ে জনগণের এই কর্মসূচির সাথে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করছি।
তিনি উচ্চ আদালত পাহাড়ি জনগণের ন্যায্য দাবি মেনে পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০ বহাল রাখবে বলে প্রত্যাশা করেন।
ফয়জুল হাকিম বলেন, ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধি আদালতের মাধ্যমে বাতিল করার চক্রান্ত চলছে। এই আইন বাতিল হলে পাহাড়িদের বংশ পরম্পরায় প্রথাগত আইন হারাবে। উচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্তকে আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা আশা রাখবো উচ্চ আদালত পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জাতিসত্তাগুলোর বংশ পরম্পরায় প্রথাগত ভূমি অধিকারসহ যে আইন রয়েছে তা বহাল রাখবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গেছে। ১৪ সাল থেকে প্রতিটি নির্বাচনে সরকার জনগণের ভোটাধিকার কায়েম করতে পারেনি। দেশি-বিদেশী চক্রান্ত কারণে এদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে নস্যাৎ করা হয়েছে। সমগ্র জনগণের উপর এক ফ্যাসিবাদী শাসন জারি রাখা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে '১১ দফা" নির্দেশনার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম সেনা শাসন জারি রাখা হয়েছে।
সুনয়ন চাকমা বলেন, জনমিতি পরিবর্তনের জন্য ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের ওপর যেভাবে হামলা চালাচ্ছে, ঠিক তেমনি এ রাষ্ট্র পার্বত্য চট্টগ্রামে জনমিতি পরিবর্তনের জন্য নানা চক্রান্ত চালাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯০০ সালের শাসন বিধি বাতিলের ষড়যন্ত্র করছে। এই আইন বাতিল হলে পাহাড়ি জনগণের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের সমতলে শাসন ব্যবস্থা ও পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ আলাদা ছিল। এক সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম স্বাধীন ও বিশেষ স্বায়িত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ছিল। আমরা আমাদের এই প্রথাগত অধিকার রক্ষার আইনকে হারিয়ে যেতে দিতে পারি না। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে তা রক্ষা করব।


إرسال تعليق