প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দীঘিনালায় পিসিপির ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত

পিসিপির ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দীঘিনালায় ছাত্র সমাবেশ 

নিজস্ব প্রতিবেদক :

বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে সামনে রেখে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় ছাত্র সমাবেশ করেছে সংগঠনটি।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে ২০২৪) সকালে পিসিপির খাগড়াছড়ি জেলা শাখা এই ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করে।

ছাত্র সমাবেশের ব্যানার শ্লোগান ছিল, “সরকারপন্থীদের হটিয়ে পাহাড় ও সমতলে জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলুন” ও “পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে পর্যাপ্ত ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দাও, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত ও গোয়েন্দা নজরদারি বন্ধ কর।”

সকাল ১০টায় পিসিপির দলীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন পিসিপি’র জেলা সভাপতি শান্ত চাকমা ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ইউপিডিএফ নেতা মিল্টন চাকমা।

সমাবেশ শুরুর পূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সকল শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

পিসিপির খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি শান্ত চাকমার সভাপতিত্বে ও সদস্য সুনীল ময় চাকমার সঞ্চালনায় ছাত্র সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফের দীঘিনালা ইউনিট সমন্বয়ক ও পিসিপির সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মিল্টন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা আহ্বায়ক এন্টি চাকমা ও পিসিপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শুভাশীষ চাকমা।


ইউপিডিএফ নেতা মিল্টন চাকমা বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্যায় নিপীড়নের বিরুদ্ধে তিন দশকের অধিক আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। গঠনের পর থেকে সংগঠনটি নানা বাধা মোকাবিলা করে শাসকগোষ্ঠির পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে নিয়োজিত রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের সংগ্রামকে বেগবান করতে পিসিপির পতাকাতলে সমবেত হয়ে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

পিসিপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শুভাশীষ চাকমা বলেন, ’৮৯-এ লংগুদু গণহত্যার রক্তবীজ থেকে জন্ম নেয়া পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সংগ্রামী ধারাকে স্তব্দ করে দেয়ার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী মুক্তিকামী মেহনতি মানুষকে দমিয়ে রাখতে রাজাকার, আল বদর, আল শামস্, শান্তি কমিটি গঠন করে দিয়ে আন্দোলন ভণ্ডুল করার হীন প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। মামলা-হামলা, নারীর ওপর সহিংসতা চালিয়েও তৎকালীন অধিকারকামী জনতাকে তারা দমিয়ে রাখতে পারেনি। ঠিক একইভাবে বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে দমন করতে মুখোশ বাহিনী সৃষ্টি করে অরাজক পরিস্থিতি জিইয়ে রাখা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ১৯৮৯ সালের ২০ মে গঠন হওয়ার পর থেকে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলা করে এসেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের সংগ্রামকে জোরদার করতে দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে আমাদের এই প্রিয় সংগঠনটি গণতান্ত্রিকভাবে তার ন্যায়সঙ্গত সংগ্রাম জারি রেখেছে। পিসিপির এই ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে স্তব্দ করে দেয়ার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র একের পর এক খুন-গুম অপহরণ চালিয়ে যাচ্ছে। একই সাথে রাষ্ট্রযন্ত্রের নীলনক্সা বাস্তবায়নের লক্ষে পিসিপি নামধারী সরকারপন্থী সন্ত্রাসীরাও উঠে পড়ে লেগেছে। তারা আন্দোলনের নামে ভাওতাবাজি ও ছাত্রসমাজকে বিভক্ত ও দুর্বল করার হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।

এইচডব্লিউএফ নেত্রী এন্টি চাকমা বলেন, পাহাড়ে নারী সহিংসতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিনিয়তই সেনা-সেটলার কর্তৃক নারী নির্যাতন, স্কুল কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক হেনস্তা, নজদারিসহ নানা হয়রানিমূলক কার্যক্রম জারি রাখা হয়েছে। তিনি লে. ফেরদৌস কর্তৃক কল্পনা চাকমা অপহরণ, কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে সোহাগী জাহান তনুকে গণধর্ষণের পরে হত্যার ঘটনা তুলে ধরেন।


তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষা ও ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্বদানের ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসার জন্য ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।

সমাবেশের সভাপতি শান্ত চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকারহারা মানুষকে নিশ্চিহ্ন করতে রাষ্ট্র দমননীতি জারি রেখেছে। এ অঞ্চলে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় বাহিনী পাহাড়িদের ভীতসন্ত্রস্ত্র করতে প্রকাশ্যে যুদ্ধের হুমকি দেয়। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বাহিনী কিভাবে তার দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠির ওপর এমন শাসন-শোষণ চালাতে পারে?


তিনি বলেন, বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠি পাহাড়িদের ওপর জাতিগত নিপীড়ন জারি রাখতে দেশে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা চালু রেখেছে। সমতলে গণতান্ত্রিক শাসন চলমান থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে চলছে সামারিক শাসন। কিন্তু অন্যায় দমন-পীড়ন সত্বেও পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার আপোষহীন সংগ্রামে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদকে দমিয়ে রাখা যায়নি। শত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে পিসিপি সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে যাচ্ছে।

তিনি সররপন্থীদেরদের হটিয়ে পাহাড় ও সমতলে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে ছাত্র সমাজকে পিসিপির পতাকাতলে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান।

সমাবেশ শেষে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করা হয়।

Post a Comment

أحدث أقدم