জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের নেতা অ্যাডভোকেট ভুলন ভৌমিক বলেছেন, “পাহাড় আজ হানাদার বাহিনীর কবলে পড়েছে। সেনাবাহিনী ৭১ সালের হানাদার বাহিনীর মত বান্দরবানের রুমা-থানচিতে নিরীহ বম-ত্রিপুরা জাতিসত্তার জনগণকে আটক করে ‘তোর নাম কি, বাড়ি কোথায়’ ইত্যাদি প্রশ্ন করে হয়রানি করছে। দুর্গম এলাকা থেকে আসা পাহাড়িদের ৫ কেজির বেশি চাল ক্রয়ের নিষেধাজ্ঞার ঘটনা পাকবাহিনীর ভূমিকা ছাড়া কিছুই নয়”।
আজ শুক্রবার (১৯ এপ্রিল ২০২৪) বিকালে চট্টগ্রামে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের আয়োজিত বিক্ষাভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
“রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির সাথে জড়িতদের গ্রেফতার কর” শ্লোগানে বান্দরবানে কেএনএফের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানের নামে গণগ্রেফতার ও হয়রানির প্রতিবাদে এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়ের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও আটককৃতদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে তিন সংগঠন উক্ত বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।
বিকাল সাড়ে ৩টায় তিন সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থকরা চট্টগ্রাম নগরের ডিসি হিল থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তারা মিছিল নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাব এলাকা ঘুরে চেরাগী পাহাড়ের পাদদেশে এক সমাবেশে মিলিত হন।
গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শুভ চাকের সভাপতিত্বে ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি সোহেল চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল চট্টগ্রাম অঞ্চলের পূর্ব-৩ সভাপতি এডভোকেট ভুলন ভৌমিক, গণসংহতি আন্দোলন, চট্টগ্রাম সমন্বয়ক হাসান মারুফ রুমি, বাসদ (মার্ক্সবাদী) চট্টগ্রামের সমন্বয়ক এডভোকেট শফিউদ্দিন কবির আবিদ, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট চট্টগ্রাম অঞ্চলের ধ্রুব বড়ুয়া, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, চবি শাখার সভাপতি রোনাল চাকমা এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নীতি চাকমা প্রমূখ। এতে সংহতি প্রকাশ করেন বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তিতাস চাকমা, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী চট্টগ্রাম নগরের সংগঠক মহিদুল ইসলাম আবিদ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি সাইফুর রুদ্র।
সমাবেশে অ্যাডভোকেট ভূলন ভৌমিক বলেন, আমরা এমন একটা দেশ সৃষ্টি করেছি যে দেশ স্বাধীনতার ৫২ বছরেও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। আওয়ামীলীগ সরকার জনগণের সমর্থন হারিয়ে ফ্যাসিবাদীতে পরিণত হয়েছে। তার বাহিনী দিয়ে জনগণকে অত্যাচার করছে। পাহাড় আজ হানাদার বাহিনীর কবলে পড়েছে। সেনাবাহিনী ৭১ সালের হানাদার বাহিনীর মত বান্দরবান রুমা-থানচিতে নিরীহ বম-ত্রিপুরা জাতিসত্তার জনগণকে আটক করে ‘তোর নাম কি, বাড়ি কোথায়’ ইত্যাদি প্রশ্ন করে হয়রানি করছে। দুর্গম এলাকা থেকে আসা পাহাড়িদের ৫ কেজির বেশি চাল ক্রয়ের নিষেধাজ্ঞার ঘটনা পাকবাহিনীর ভূমিকা ছাড়া কিছুই নয়।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসী ধরার নামে ঈদের ছুটিতে শহর থেকে বাড়িতে যাওয়া শিক্ষার্থীসহ গর্ভবর্তী মহিলাদের আটক করা হয়েছে, যা মেনে নেওয়ার নয়। পাখি মারার বন্দুক দিয়ে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা ইতিমধ্যে দেশের মানুষের কাছে হাসির খোরাক হয়েছে। ব্যাংকের পাশে বিজিবি পুলিশ ফাঁড়ি কীভাবে সম্ভব তা আদৌ রহস্য রয়েছে গেছে। ঘটনায় জড়িতদের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট দেখা গেলেও, তাদের আটক করতে ব্যর্থ হয়েছে দেশের পেশাধারী বাহিনীরা। তাদের যদি এতই শক্তি থাকে তাহলে কেন প্রকৃত জড়িতদের আটক না করে সাধারণ জনগণকে আটক করা হচ্ছে তার উপযুক্ত জবাব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সেনা প্রধান ও র্যাব প্রধানকে দিতে হবে।
হাসান মারুফ রুমি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্বরতা চলছে। পাহাড়ের বান্দরবানের মানুষ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে। তাদেরকে এই পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে সরকার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী সরকার দেশের ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানি করে পাহাড়িদের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে। দেশের জালিম সরকার পাহাড়ে হত্যাকান্ড গুলোকে বৈধতা দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বান্দরবানে কেএনএফ গঠনের সময় কারা কলকাঠি নাড়িয়েছে তা আমরা দেখেছি। কারা নাথাম বমের কাঁধে হাত রেখে ছিল তা দেশের মানুষ জানে। দেশের সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্র যখন তার যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে ব্যর্থ হয় তখনই সরকার বম, ত্রিপুরা, চাকমা, মার্মা জাতিসত্তাদের নিপীড়ন চালায় তার অস্ত্রধারী বাহিনী দিয়ে।
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যাংক ডাকাতের ঘটনা নিয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দিতে পারেননি। বম জাতিকে নিপীড়ন করে আপনারা পার পাবেন না। নাটক বন্ধ করে নিরীহ বমদের মুক্তি দিয়ে সেনাশাসন প্রত্যাহার করুন।
তিনি রুমা-থানচি থেকে যে নিরীহ শিক্ষার্থী, নারীদের আটক করা হয়েছে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যে লোলুপ দৃষ্টি দিয়ে তারা দেখে থাকে তাতে ইজ্জ্বত রক্ষার কথা আমাদের ভাবায়। আমি তাদের মুক্তির দাবি জানাই।
রোনাল চাকমা বলেন, বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে গর্ভবতী মা, শিক্ষার্থীসহ নির্বিচারে গণগ্রেফতারে ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। স্বাধীন দেশে আজো আমাদের প্রশ্ন করতে হচ্ছে দেশে কি পাঞ্জাবি শাসন চলছে? কেন পাহাড়ে যুগের পর যুগ সেনাশাসনের যাঁতাকলে সংখ্যালুঘু জাতি মা বোনদের এভাবে পিষ্ট করা হচ্ছে?
তিনি বলেন, পাহাড়ি জনগণ কোনো জলদস্যু নয়! ইতিহাসের কথা স্মরণ করুন। পাহাড়িদের মোঘল বৃটিশদের সাথে লড়াই করার ইতিহাস রয়েছে। সন্ত্রাসী ধরার অভিযানের নামে যদি গর্ভবতী মাকে অন্যায়ভাবে আটক করা হয়, তাহলে সে সন্তান জন্মের পরেই আপনাদের শাসনের বিরুদ্ধে রুঁখে দাঁড়াবে। ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের আটকের ব্যর্থতার দায় জনগণের ওপর চাপানো কোনো সভ্য পেশাধারী বাহিনীর বাহাদুরি হতে পারে না।
তিনি অবিলম্বে আটক নিরপরাধ জনগণকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানান।


Post a Comment