লড়াই সংগ্রামের ২৭ বছরে পিসিপি



পার্বত্য চট্টগ্রামের লড়াকু ছাত্র সমাজের প্রাণপ্রিয় সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ বা সংক্ষেপে পিসিপি। সংগঠনের মূল নাম বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। ১৯৮৯ সালের ২০ মে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল রাঙামাটির লুঙুদু গণহত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে।
১৯৮৯ সাল এবং তার আগে পরে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা বাংলাদেশে চলছিল সামরিক শাসন। কোনো ধরণের সংগঠন ও  মিছিল মিটিঙ করার পরিবেশ তখন ছিল না। সামরিক সরকার পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামকে সেনা ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে তৈরী করে রেখেছিল। শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র সংগ্রাম দমন করার নামে এলাকায় এলাকায় জারি রেখেছিল দমন পীড়ন, নির্যাতন নিপীড়ন ছিল তখন নিত্যকার স্বাভাবিক ঘটনা যেন। সেটলার দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে সংঘটন করা হয়েছিল ডজনের অধিক গণহত্যা। জুম্ম জনগণের জায়গা জমি ভিটেমাটি দখল করে সেটলারদের বসতি সম্প্রসারণ চলছিল অহরহ। অধিকারে কথা বলা,, স্বায়ত্তশাসনের দাবি করা মানেই তখন ছিল অপরাধ, শাস্তি ভোগ করতে হত নির্ঘাট।
ঠিক এমনি এক দমবন্ধ করা, শ্বাসরূদ্ধকর পরিস্থিতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের তৎকালীন লড়াকু ছাত্র সমাজের লড়াকু প্রতিবাদী অংশ কাজ শুরু করেছিল। গোপনে নানা ধরণের কাজের মাধ্যমে জুম্ম ছাত্র সমাজকে সংগঠিত করাসহ সকল ধরণের নিপীড়ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে নানা ধরনের প্রতিবাদ প্রতিরোধ তারা জারি রেখেছিল। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিত্তিক সংগঠন তৈরী করে তারা কাজ চালিয়ে যাাচ্ছিল। পরে যখন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ গঠন করা হয় তখন এই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক সংগঠনসমূহ পিসিপি’র পতাকাতলে লীন হয়ে যায়।
তারপর থেকে শুরু হয় সংগঠনের গৌরবময় ঘটনাবহুল পথচলা।
দীর্ঘ ২৭টি বছরে পিসিপিকে সংগঠনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সুবিধাবাদিতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। সুবিধাবাদী আপোষকামীরা সংগঠনকে নিজেদের আখের গোছাবার জন্য, নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার করতে চেয়েছিল। তারা চেয়েছিল, দিনে তারা সংগ্রামী সাজবে, রাতে দালালদের সাথে সম্পর্ক তৈরী করে নিজেদ্রে স্বার্থসিদ্ধি করবে। কিন্তু আপোষকামীরা পরাজিত হয়। সংগঠন থেকে তাদের হঠিয়ে দিতে সক্ষম হয় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের লড়াকু নেতৃত্ব।
এরপর পিসিপির লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত গতিতে ছাত্র সমাজসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের আনাচে কানাচে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রসমাজের সক্রিয় ভুমিকার কারণে সরকার ও সেনাবাহিনীর দালালসহ সুবিধাবাদী আপোষকামী প্রতিক্রিয়াশীল অংশ কোণঠাসা হয়ে পড়ে।
সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের প্রগতিশীল অংশের সমর্থন ও সহমর্মিতা আদায় করতে সক্ষম হয়। কিন্তু একইসাথে চলতে থাকে সংগঠনের অগ্রযাত্রাকে রূদ্ধ করার নানা ষড়যন্ত্র চক্রান্ত। সংগঠনের কার্যক্রম বৃদ্ধির সাথে সাথে শুরু হয় সরকারী দমনপীড়ন। পিসিপির বিভিন্ন প্রতিবাদী সমাবেশ ও কর্মসূচি বানচাল করে দেয়ার জন্য সরকার সেনা প্রশাসন উঠেপড়ে লাগে। দাগি আসামী মাস্তান ও সামাজিক বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদের দিয়ে মুখোশবাহিনী সৃষ্টি করে পিসিপির বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া হয়।
কিন্তু সকল ধরণের চ্ক্রান্ত ষড়যন্ত্র ছাত্র সমাজের প্রবল প্রতিরোধের মুখে ভেসে চলে যায়।
এরপর সংগঠনের মধ্যে বিভেদের প্রচেষ্টা শুরু হয়। কিন্তু দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামে পোড় খেয়ে লড়াকু জনতা ও ছাত্র সমাজ আজ বুঝতে সক্ষম হয়েছে সত্যিকার লড়াকু ধারার ছাত্র সংগঠনটি হল পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়াইরত আমাদের সকলের প্রাণপ্রিয় সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ বা পিসিপি।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ২৭ত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই প্রত্যয় ব্যক্ত করছে যে, অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত লড়াকু ছাত্র সমাজ ও জনগণকে নিয়ে সংগঠন আপোষহীনভাবে লড়াই সংগ্রাম জারি রাখবে।
অধিকার আদায়ের এই লড়াইয়ে শরীক হোন!
ইস্পাতকঠিন দৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলুন!

Post a Comment

Previous Post Next Post