সেনাবাহিনী ও রাষ্ট্রীয় মদদে বিপুল চাকমাসহ চার জনকে হত্যা করা হয়েছে
বুধবার (৩ জানুয়ারি ২০২৪) দুপুর ১:০০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতারা এসব অভিযোগ করেন।
গত ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলাধীন লোগাঙ ইউনিয়নের অনিলপাড়ায় সেনাবাহিনীর মদদে নব্য মুখোশ বাহিনীর সন্ত্রাসীদের দিয়ে বিপুল চাকমা, সুনীল ত্রিপুরা, লিটন চাকমা ও রুহিন ত্রিপুরাকে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট উক্ত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে বিপুল চাকমাসহ চার নেতার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত; এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনি-সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া, সন্ত্রাসীদের মদদদানকারী সেনা কর্মকর্তাদের শাস্তি প্রদান, পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন দেয়াসহ ৮ দফা দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ চৌধুরী। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ রায়, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাওফিকা প্রিয়া, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের, সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক তানজিম হায়দার প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য ছাত্র জোটের নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ সোমবার রাত ১০টা হতে ১১টার মধ্যে খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলাধীন লোগাঙ ইউনিয়নের অনিলপাড়ায় সেনাবাহিনীর একটি অংশের মদদে নব্য মুখোশ বাহিনীর দুর্বৃত্তরা বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সুনীল ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ-সভাপতি লিটন চাকমা, ও ইউনাইডেট পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর সদস্য রুহিন বিকাশ ত্রিপুরাকে গুলি করে হত্যা করেছে। একই সময়ে সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থল থেকে ইউপিডিএফ সংগঠক নীতি দত্ত চাকমা, হরি কমল ত্রিপুরা ও সদস্য প্রকাশ ত্রিপুরাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং তিন দিন পর রাত আনুমানিক ১০টার সময় সেনাবাহিনী পানছড়ির তারাবনছড়া নামক এলাকা থেকে ‘অপহৃতদের উদ্ধার’ নাটক সাজিয়ে তাদেরকে পুলিশের নিকট সোপর্দ করে। পরে খাগড়াছড়ি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপহৃতদের পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
পানছড়িতে সাবেক ছাত্র নেতা বিপুল চাকমাসহ ৪ জন হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রতিবাদে ও হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবিতে আমরা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের পক্ষ থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মিছিল, বিক্ষোভ, সংহতি সমাবেশ এবং ঘটনাস্থলে সরেজমিনে তদন্ত করতে যাই। হত্যার প্রতিবাদে ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ সন্ধ্যায় গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের আয়োজিত মশাল মিছিলের শেষ পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা করেছিল।
পানছড়িতে বর্বোরচিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেশের বিবেকবান মানুষের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। পাহাড়-সমতলে প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে। শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ছাত্র সংগঠনসমূহ বিবৃতি দিয়ে হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, সিলেট, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে। এছাড়াও হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন আমেরিকা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। ঘটনার নিন্দা-প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন (সিএইচটি কমিশন), ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্ক গ্রুপ ফর ইন্ডিজেনাস এফেয়ার্স (আইডব্লিউজিআইএ) এবং ভারতের চাকমা ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া ও হিউম্যানিটি প্রটেকশন ফোরাম।
পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে এবং দেশের বাইরে হত্যাকারী সন্ত্রাসীদের নিন্দা ও বিচারের দাবি অব্যাহত রয়েছে। ঘটনার ২০ দিন অতিবাহিত হলেও প্রশাসন সন্ত্রাসীদের কাউকে এখনো পর্যন্ত গ্রেফতার করেনি। স্থানীয় পানছড়ি উপজেলা প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
তারা অভিযোগ করে বলেন, রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনী তাদের সৃষ্ট ‘নব্য মুখোশ’ সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে পানছড়িতে বিপুল চাকমাসহ ৪ জনকে হত্যা করেছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি পুরোপুরি রাজনৈতিক এবং এটি বিরোধী মতের রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিদের স্তব্ধ করে দেয়ার লক্ষ্যে রাষ্ট্রের সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
স্থানীয় জনগণের ভাষ্য ও আমাদের সরেজমিনে ঘুরে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ‘গত ১১ ডিসেম্বর হত্যার ঘটনার পরের দিন ১২ ডিসেম্বর সকালে পানছড়ি থানার ওসি শফিউল আজম ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যেতে চাইলে পানছড়ি উপজেলার সাব-জোন কমান্ডার মেজর জোবায়েদ মোহাম্মদ তাকে বাধা দেন। এরপর ওসি তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে বিষয়টি অবগত করেন। দুপুর ১২টার দিকে খাগড়াছড়ি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মোহাম্মদ জসিমউদ্দীন ও আবু জাফর মোহাম্মদ অপরাধ সংঘটিত স্থল পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে পানছড়ি থানায় পৌঁছান। কিন্তু তাদেরকেও ঘটনাস্থলে যেতে দেয়া হয়নি। বিকেল পৌনে ৩টার দিকে খাগড়াছড়ি জেলার পুলিশ সুপার মুক্তা ধর পানছড়ি পৌঁছান এবং পানছড়ি সাবজোনের সেনা কর্মকর্তাদের সাথে দেনদরবার চালান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তারা অনুমতি দেয়ার পরই কেবল হত্যা সংঘটিত হবার ১৯ ঘন্টা পর পরদিন বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ভিকটিমদের মৃতদেহগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়।’
কাজেই ঘটনার বিবরণ থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে পানছড়ির হত্যাকাণ্ডে রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনীর সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ৫২ বছরেও এদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ছাত্র জোট নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর শোষণ, নিপীড়ন ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা পূর্ব বাংলার জনগণ দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ৫২ বছর অতিক্রম হলেও এদেশের জনগণের সে আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাংলার জনগণ পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর সরাসরি নির্যাতন ও শোষণ হতে মুক্ত হয়েছে বটে, কিন্তু সত্যিকার অর্থে জনগণের পরিপূর্ণ মুক্তি বা বিজয় অর্জিত হয়নি, সাধারণ জনগণের ভাগ্যের উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন সাধিত হয়নি।
দেশের এক প্রান্তে অবস্থিত দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের অবস্থা আরো করুণ, আরো মর্মান্তিক। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর মতোই দেশের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত নব্য শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের সাথে বৈরী আচরণ করতে থাকে। দেশের সংবিধান রচনার সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের ভিন্ন ভাষাভাষী সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের অধিকারের বিষয়টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। দেশের সংবিধানে জাতিসত্তার স্বীকৃতি পর্যন্ত দেয়া হয়নি। ২০১১ সালে ৩০ শে জুন পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনীতে দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিসত্তাদের ওপর “বাঙালি জাতীয়তা” চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অল্প পরে পার্বত্য চট্টগ্রামে অঘোষিত সেনা শাসন জারি রাখা হয় এবং ২০১৫ সালে ৭ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘‘১১ দফা” নির্দেশনা জারির মাধ্যমে পাহাড়ে সেনা শাসনকে পূর্ণাঙ্গভাবে বৈধতা দেয়া হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের প্রতিবাদী কণ্ঠ রুদ্ধ করতে চালানো হয় অত্যাচার উৎপীড়নের স্টীম রোলার। বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করে নিজ বাসভূমে সংখ্যালঘুতে পরিণত করার সকল ধরনের ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। ৮০ দশকে সমতল থেকে নিরীহ বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামে বে-আইনীভাবে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে তাদেরকে পাহাড়িদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনী সেটলার বাঙালিদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করে পাহাড়িদের ওপর ডজনের অধিক হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। পরিকল্পিতভাবে সেটলার বাঙালি আর পাহাড়িদের মধ্যে কৃত্রিমভাবে সংঘাত জিইয়ে রাখা হয়েছে। ‘পার্বত্য চুক্তির’ সম্পাদনের পর সেনা-সেটলার কর্তৃক এ পর্যন্ত প্রায় ২০টির অধিক বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত হয়েছে।
শাসকগোষ্ঠী সুপরিকল্পিতভাবে পাহাড়িদের বিভক্ত করে দ্বন্দ্ব-সংঘাত জিইয়ে রেখেছে বলে মন্তব্য করে তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে খুন-গুম-হত্যা-অপহরণের ঘটনা নতুন কিছু নয়। ‘পার্বত্য চুক্তি’ অনুযায়ী তিন পার্বত্য জেলায় ৬টি সেনা ক্যাম্প ব্যতিত সকল অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারে কথা থাকলেও চুক্তির পরবর্তী ২৬টি বছর পেরিয়ে গেলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হয়নি। বরং সেখানে নতুন করে র্যাব গঠন ও আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়নের সদর দপ্তর স্থাপন করা হয়েছে। নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে শাসকগোষ্ঠী সুপরিকল্পিতভাবে পাহাড়িদের বিভক্ত করে দ্বন্দ্ব-সংঘাত জিইয়ে রেখেছে। ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ও ব্রিগ্রেডিয়ার আব্দুল মোতালেব সাজ্জাত মাহমুদ-এর নেতৃত্বে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের খাগড়াপুর কমিউনিটি সেন্টারে সেনা-গোয়েন্দা সংস্থার কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনিতে ইউপিডিএফ থেকে বহিষ্কৃত কর্মীদের দিয়ে তথাকথিত ‘ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক’ নাম দিয়ে ‘নব্য মুখোশ’ সন্ত্রাসী বাহিনী সৃষ্টি করা হয়েছে। গঠনের পর পরই ৫ ডিসেম্বর ২০১৭ রাঙামাটির নান্যাচরে ‘নব্য মুখোশ’ সন্ত্রাসীরা ইউপিডিএফ সমর্থক ও সাবেক ইউপি সদস্য অনাদি রঞ্জন চাকমাকে গুলি করে হত্যা করেছিল। এছাড়াও ৩ জানুয়ারি ২০১৮ সালে খাগড়াছড়ি শহরে নিজ বাসার গেইট থেকে ইউপিডিএফের সংগঠক মিঠুন চাকমাকে তুলে নিয়ে হত্যা, ১৮ আগস্ট ২০১৮ সালে খাগড়াছড়ি শহর স্বনির্ভর বাজারে পুলিশ-বিজিবির নিরাপত্তা বেষ্টনিতে দিনদুপুরে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ছাত্র নেতা তপন-এলটন, যুব নেতা পলাশ চাকমাসহ ৭ জনকে হত্যা এবং সর্বশেষ ১১ ডিসেম্বরর ২০২৩ সালে পানছড়িতে বিপুল-সুনীল-লিটন-রুহিনকে হত্যাসহ ২০১৭-২০২৩ সাল পর্যন্ত ‘নব্য মুখোশ’ ও জেএসএস সংস্কারপন্থী কর্তৃক ৫৫ জন ইউপিডিএফ ও ইউপিডিএফের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থকদের হত্যা করা হয়েছে। এই প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলেও হত্যাকারী, খুনী, সন্ত্রাসীদের প্রশাসন কাউকেই গ্রেফতার করেনি। প্রশাসনের নাকের ডগায় সন্ত্রাসীরা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান শহরে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে পানছড়িতে বিপুল-সুনীল-লিটন-রুহিনসহ পাহাড়ের সকল হত্যাকাণ্ডের ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় মদদে হত্যাকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত ৮দফা দাবি হলো: ১. পানছড়িতে রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট ‘নব্য মুখোশ’ বাহিনী কর্তৃক কমরেড বিপুল-সুনীল-লিটন-রুহিনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিচার বিভাগী তদন্ত করতে হবে, ২. কমরেড বিপুল চাকমাসহ ৪ জনের হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনি সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে এবং সন্ত্রাসীদের মদদদানকারী সেনা কর্মকর্তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, ৩. ‘নব্য মুখোশ বাহিনী’ ভেঙ্গে দিয়ে এই খুনি-সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে হবে, ৪. পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা শাসন তুলে নিয়ে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে, ৫. পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে, ৬। পাহাড়ি জনগণের প্রথাগত ভূমির অধিকার দিতে হবে, ৭. পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত ‘১১ দফা’ নির্দেশনা বাতিল করতে হবে, ৮। সারাদেশে দমন-পীড়ন বন্ধ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য ছাড়াও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ রায়।

Post a Comment