পাহাড়িরা তাদের অধিকার আদায়ের কথা বললে বলা হয় দেশদ্রোহী : রোনাল চাকমা

ঢাকা প্রতিনিধি : বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা রোনাল চাকমা বলেছেন পার্বত্য চট্টগ্রামে যুগ যুগ ধরে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন চালানো হচ্ছে, পাহাড়িদের ভূমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও বহিরাগত সেটলার বাঙ্গালি কর্তৃক প্রতিনিয়ত পাহাড়ি মা-বোনের ইজ্জ্বত কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় এ নিপীড়নের বিরুদ্ধে পাহাড়িরা যখন প্রতিবাদ করে, পাহাড়িরা তাদের অধিকার আদায়ের কথা বলে তখন তাদের বলা হয় দেশদ্রোহী। 

গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের’ পদত্যাগ এবং শিক্ষা ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়সহ ছয় দফা দাবিতে সমাবেশ বক্তব্য প্রদান কালে তিনি এসব কথা বলেন।

সমাবেশে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের উত্থাপিত অন্য দাবিগুলো হলো, জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২১ বাতিল করা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ শিক্ষা উপকরণের দাম কমানো, শ্রমিকদের বেতন সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা ও পরিষেবা বিল বাতিল করা এবং ‘পাহাড়ে সেনা শাসন’ প্রত্যাহার ও সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা।

সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী ও জাবি শাখার সংগঠক সজীব আহমেদ, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি সাইদুল হক নিশান, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায়, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রোনাল চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায় প্রমূখ।

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায় বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে দেশের বিরোধী মত বা পক্ষকে উপড়ে ফেলা হয়েছে। আমরা দেখেছি কিছুদিন আগে ন্যায্য অধিকার আদায়ের প্রতিবাদ করার জন্য পোশাকশ্রমিককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী সরকার স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে। সেই স্বাধীনতা যুদ্ধে কি শ্রমিকরা ছিলেন না? বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোকে নির্যাতনের কারখানা বানানো হয়েছে। ক্ষমতাসীন বড় ভাইরা জুনিয়রদের নানাভাবে নির্যাতন করে, কিন্তু তার বিচার হয় না। দেশের উন্নয়ন কাজে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয় না। সরকার শুধুমাত্র ভোটাধিকারকে গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে দেখেন। বাকি অধিকারগুলোতে তাদের নজর নেই। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদগুলো বিলুপ্ত করে দিয়েছে।’

ছাত্র নেতা রোনাল চাকমা বলেন,  ‘দেশের সবচেয়ে অভাগা জনগণ হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ। পার্বত্য এলাকার মানুষদের জায়গা-জমি ছিনিয়ে নিয়ে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। মন্ত্রী-শাসকরা বলছেন, পাহাড় কেটে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা হবে। কিন্তু প্রকৃতি ধ্বংস করে কেন শিল্প গড়ে তুলতে হবে? পাহাড়িরা তাদের অধিকার আদায়ের কথা বললে তাদের বলা হয় দেশদ্রোহী। কিন্তু পাহাড়িদের জায়গা-জমি দখল করে যে শিল্প গড়ে তোলা হয়, এ কথা কেউ বলে না। 

তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা বলেছিলেন, 'পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি' মাধ্যমে সেখানকার মানুষের মধ্যে শান্তি ফিরে আসবে। কিন্তু হয়েছে তার উল্টো। শান্তি চলে গেছে সেখানকার মানুষের। পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ এই অবৈধ সরকারের নির্বাচনী তফসিল প্রত্যাহার করেছি। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে বাদ দিয়ে কোনোভাবেই সফল ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।’

সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের অমর্ত্য রায় বলেন, ‘বর্তমান সরকারের উন্নয়নের গল্প এখন একটা বিড়ম্বনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ দেশের কোনো উন্নয়নে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়নি। দেশে মেট্রোরেল বানানো হয়েছে। কিন্তু উচ্চ ভাড়ার কারণে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির লোকেরা সেই মেট্রোরেলে চড়তে পারছে না। যাদের শ্রমের ফলে উন্নয়ন হচ্ছে, তারাই সেই উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দেশের শিক্ষা খাতের বেহাল দশা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখা যায় উইকেন্ড কোর্স চালু করে বাণিজ্য করছেন শিক্ষকরা। ফলে মূল শিক্ষার্থীদের দিকে খেয়াল না করে শিক্ষকরা নিজেদের বাণিজ্য পরিচালনায় ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন। আবাসিক হলগুলোর দশাও বেহাল। ২০১৮ সালের পর থেকে গণরুম প্রথা জোরালোভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্রলীগ গণরুমের এই শিক্ষার্থীদের মারামারিসহ বিভিন্ন অপকর্মে সংশ্লিষ্ট করার জন্য জোর করে ব্যবহার করে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা বর্তমান সরকারের ক্ষমতা কাঠামো, সেটা ভেঙে দেওয়া জরুরি বলে মনে করি।’

Post a Comment

أحدث أقدم