নিজস্ব প্রতিবেদ : লংগদু গণহত্যার ৩৬তম বার্ষিকীতে নিহতদের স্মরণে রাঙামাটির , চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ বিভিন্নস্থানে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও আলোচনা সভা করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) শাখা।
রবিবার (৪ মে ২০২৫) স্ব স্ব শাখার উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এসময় বক্তারা লংগদু গণহত্যাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত সংঘটিত সকল গণহত্যার শ্বেতপত্র প্রকাশপূর্বক বিচারের দাবি জানান।
রাঙামাটি
সদর : লংগদু গণহত্যার ৩৬তম বার্ষিকীতে নিহতদের স্মরণে রাঙামাটির কুদুকছড়িতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), রাঙামাটি জেলা শাখা।
![]() |
| কুদুকছড়িতে পিসিপি’র প্রদীপ প্রজ্জ্বলন |
অনুষ্ঠানে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বারিঝে চাকমা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ডজনের অধিক বর্বরোতম গণহত্যার মধ্যে লংগদু গণহত্যা একটি। ৩৬ বছরেও এদেশের সরকার এই গণহত্যার বিচার করেনি।
তিনি বলেন, এই গণহত্যার ঘটনায় তৎকালিন পাহাড়ি নেতৃবৃন্দ, ধর্মীয় গুরুরা এবং ছাত্র সমাজ প্রতিবাদ করেছিল। এ গণহত্যার বিরুদ্ধে পাহড়ি ছাত্র সমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে ’৮৯ সালের ২০ মে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ গঠন করেছিল এবং পরদিন স্বৈরশাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ঢাকার বুকে ঘটনার প্রতিবাদের মৌন মিছিল করেছিল।
বারিঝে চাকমা বলেন, লংগদু গণহত্যাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত সংঘটিত গণহত্যার বিচার না হওয়ার করণে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদে এখনো সাম্প্রদায়িক হামলা, খুন, গুম, ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় ভবিষ্যতে আরো যে গণহত্যা চালানো হবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হতে না পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে।
তিনি লংগদু গণহত্যাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত সংঘটিত সকল গণহত্যার শ্বেতপত্র প্রকাশপূর্বক বিচারের দাবি জানান।
নান্যাচর উপজেলা : লংগদু গণহত্যার ৩৬তম বার্ষিকীতে নিহতদের স্মরণে নান্যাচরে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ)-এর নান্যাচর উপজেলা শাখা।
রবিবার (৪ মে ২০২৫) বিকাল ৫ টার সময় এই প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়। এতে স্থানীয় শিশু, কিশোর-কিশোরীরাও অংশগ্রহণ করেন।
![]() |
| নান্যাচরে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন |
যুবনেতা প্রিয়তন চাকমা বলেন, আজ থেকে ৩৬ বছর আগে ১৯৮৯ সালের ৪ মে আজকের এই দিনে রাষ্ট্রীয় বাহিনী-সেটলাররা মিলে লংগদুতে পাহাড়িদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছিল। আর সেই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে গড়ে তুলেছিল আজকের এই ‘বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ’ বা সংক্ষেপে পিসিপি।
![]() |
| লংগুদু গণহত্যার দিবসে দুই সংগঠনের আয়োজিত প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানে মোববাতি জ্বালিয়ে নিহতদের সম্মরণ করছেন এক শিশু। ছবি নান্যাচর# |
তিনি লংগদু গণহত্যাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সকল গণহত্যার বিচারের দাবি জানান।
কাউখালী উপজেলা : রাঙামাটি জেলা কাউখালীতে লংগদু গণহত্যার ৩৬তম বার্ষিকীতে নিহতদের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেছে অগ্রণী শিশু-কিশোর কেন্দ্র (এসিসি), কাউখালী উপজেলা শাখা।
রবিবার (৪ মে ২০২৫) সন্ধ্যা ৬টার সময় এ প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়। এতে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন পিসিপি’র কাউখালী উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দ।
![]() |
| কাউখালীতে অগ্রণী শিশু-কিশোর কেন্দ্রে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন |
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : লংগদু গণহত্যার ৩৬ বছর উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে
(চবি)
আলোচনা সভা ও প্রদীপ প্রজ্বলন করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
রবিবার (৪ মে ২০২৫) সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
পাহাড়ি ছাত্র পরিদের চবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুদর্শন চাকমার সঞ্চালায় সভায় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী চবি সংগঠক আহমেদ মুগ্ধ, রাম্রাসাইন মারমা প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চবি শাখার সভাপতি রোনাল চাকমা।
তিনি প্রশ্ন করে বলেন, বম জনগোষ্ঠীর শিশুরা এখনো কারাগারে, তাঁরা এখনো শরনার্থী। তাঁদের কন্ঠ রুদ্ধ করা হচ্ছে। এরকম মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে পাহাড়-সমতলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমাদের সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে।
রাম্রা সাইন মারমা বলেন, গণহত্যা পুরোপুরি রাজনৈতিক। পাহাড়িদের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে প্রান্তিকীকরণ করা হচ্ছে, তাঁদের জায়গা জমি বেদখল করা হচ্ছে, নিপীড়ন-নির্যাতন করা হচ্ছে। রাজনৈতিক নিপীড়নের অংশ হিসেবে গণহত্যা করা হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে পাহাড়ে ৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। কারা এই হত্যাকাণ্ড করেছে সেটা আমরা জানি৷ পাহাড়ে আগেও কারা গণহত্যা করেছে সেটা আমরা জানি। কাউখালীর কলমপতি থেকে শুরু করে পার্বত্য চট্টগ্রামে গুম, খুনের সাথে রাষ্ট্র জড়িত। কল্পনা অপহরণের সাথে কারা জড়িত সবাই জানে।
তিনি আরো বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পাহাড়ের জনগণ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। অথচ এর পরে পাহাড়িদের সন্ত্রাসী-বিচ্ছিনতাবাদী বলা হচ্ছে। বৈষম্যহীন বাংলাদেশের কথা বলে পাহাড়িদের সাথে বৈষম্য করা হচ্ছে। বম জাতিগোষ্ঠীর একটা অংশকে সন্ত্রাসী তকমা দিয়ে পুরো বম জাতিকে নিধনের প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি আরো বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ২ হাজারের অধিক নিহত ও হাজার-হাজার মানুষ আহত হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই গণহত্যার এখনো বিচার করতে পারেনি। পাহাড়-সমতলে সংঘটিত সকল গণহত্যার বিচার করতে হবে। লংগদু গণহত্যার ৩ যুগ পেরিয়ে গেলেও সাম্প্রতিক সময়ে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা গণহত্যাকারীদের ভুলে যায়নি। নতুন প্রজন্ম গণহত্যার মতো অতীতের দুঃসহ স্মৃতিকে ভুলে যায়নি, ভুলে যাওয়াও চলবে না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : লংগদু গণহত্যার ৩৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
রবিবার (৪ মে ২০২৫ ) সন্ধ্যা ৭টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে অনুষ্ঠিত এই প্রদীপ প্রজ্বলন অনুষ্ঠানে পিসিপি'র নেতাকর্মীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
![]() |
| রাবি বুদ্ধিজীবী চত্ত্বরে পিসিপি নেতা-কর্মীদের প্রদীপ প্রজ্জ্বলন |
তিনি বলেন “পার্বত্য চট্টগ্রামে যতগুলো গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে তার মধ্যে লংগদু গণহত্যা অন্যতম। ১৯৮৯ সালের ৪ মে তারিখে রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় বাংলাদেশ আর্মি ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর (ভিডিপি) সহায়তায় সেটলার বাঙালিরা পাহাড়ি অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে পরিকল্পিতভাবে এ গণহত্যা চালায়। কিন্তু হত্যাকান্ডের ৩৬ বছর পরও এখনো এই গণহত্যার বিচার হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামে সংগঠিত হত্যাকান্ডগুলোর বিচার না হওয়াতে প্রতিনিয়ত এখনো পাহাড়িরা হামলা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।”
পরে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে প্রদীপ প্রজ্বলন অনুষ্ঠানটি শেষ হয়।









Post a Comment