পিসিপির রাঙামাটি জেলা শাখার ১০ম কাউন্সিল সম্পন্ন: তনুময় চাকমা সভাপতি ও বারিঝে চাকমা সাধারণ সম্পাদক করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠিত

নতুন জেলা কমিটির সদস্যরা শপথ গ্রহণ করছেন
বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর রাঙামাটি জেলা শাখার ১০ম কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে।

গতকাল বুধবার (৩১ জানুয়ারি ২০২৪) রাঙামাটি সদর উপজেলার কুদুকছড়িতে দিনব্যাপী এই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।

কাউন্সিলে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এতে সভাপতি হিসেবে তনুময় চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বারিজে চাকমা নির্বাচিত হয়েছেন।

গতকাল সকাল ৮টায় পিসিপি'র দলীয় সংগীত ‘পাহাড়ি ছাত্র -ছাত্রী দল’ গানটির মাধ্যমে দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে কাউন্সিলের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এতে পিসিপি’র দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন সংগঠনের রাঙামাটি জেলা সভাপতি রিপন আলো চাকমা ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ইউপিডিএফের রাঙামাটি জেলা ইউনিটের সংগঠক সচল চাকমা।

এরপর সকল শহীদদের উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি রিপন আলো চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক তনুময় চাকমার সঞ্চালনায় কাউন্সিল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইউপিডিএফের রাঙামাটি জেলা সংগঠক সচল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি রিমি চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক নিকন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রাঙামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক থুইনুমং মারমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার  সাধারণ সম্পাদক অমিত চাকমা।

এতে সংহতি জানিয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ- সভাপতি ধর্মশিং চাকমা ও খাগড়াছড়ি জেলার সাধারণ সম্পাদক রুপান্তর চাকমা।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপির রাঙামাটি জেলা শাখার অর্থ সম্পাদক দীপায়ন চাকমা।

কাউন্সিল অনুষ্ঠানে ইউপিডিএফ সংগঠক সচল চাকমা বলেন, নব্বই দশকে ছাত্র-গণআন্দোলনের যে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল তার কারণে সে সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিস্থিতির চিত্র পাল্টে গিয়েছিল। কিন্তু জেএসএস ছাত্র-গণআন্দোলনকে মূল্য না দিয়ে ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে আপোষ চুক্তি করে জনগণের সাথে প্রতারণা করে এবং ছাত্র-গণআন্দোলন ভেস্তে দিতে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নেয়। তারা ছাত্র সমাজকে বিভক্ত করে ফেলে। কিন্তু জুম্ম জনগণের প্রকৃত মুক্তিকামী ছাত্র সমাজকে তারা আন্দোলন থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি।

তিনি আরো বলেন, পিসিপির রাঙামাটি জেলা শাখার ১০ম কাউন্সিল এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে এক অরাজকতা বিরাজ করছে।

শাসকগোষ্ঠি তাদের সৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের দিয়ে হত্যাকাণ্ডে মেতে উঠেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাম্প্রতিকালে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে বিপুল চাকমাসহ চার তরুণ নেতা ও মহালছড়িতে দুই ই্উপিডিএফ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউপিডিএফের নেতৃত্বে চলমান অধিকার প্রতিষ্ঠার ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন স্তব্ধ করে দেয়ার লক্ষ্যে এ ঘৃণ্য খেলায় মেতে উঠেছে সরকার-শাসকগোষ্ঠি।

তিনি শাসকগোষ্ঠির এই অন্যায়-অবিচার থেকে সমাজ-জাতিকে রক্ষার জন্য ছাত্র সমাজকে পিসিপি’র পতাকাতলে এসে আন্দোলন বেগবান করার আহ্বান জানান এবং কাউন্সিলের মাধ্যমে যে কমিটি গঠিত হবে তাদেরকে দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করার নির্দেশনা দেন।

পিসিপি নেতা নিকন চাকমা বলেন, ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পাহাড়ি জাতিসত্তার অস্তিত্বকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য বর্তমান সরকার আমাদের ওপর বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়েছে। তাই জাতির এই ক্রান্তিকালে আমাদের ছাত্র সমাজকে আন্দোলন সংগ্রাম জারি রাখতে হবে।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী রিমি চাকমা বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ জন্মলগ্ন থেকে নিপীড়ন-নির্যাতন, খুন-গুম, জেল-জুলুম মোকাবেলা করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি কুনেন্টু চাকমা বিনা অপরাধে প্রায় ৫ বছরের অধিক জেলে অন্তরীণ রয়েছেন। পিসিপির সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি রূপক, মিঠুন বিপুল, সুনীল ত্রিপুরাসহ অসংখ্য নেতা-কর্মী হত্যার শিকার হয়েছেন।

তিনি শত দমন-পীড়ন, খুন-গুম, জেল-জুলুমেও পিসিপির অগ্রযাত্রা থেমে থাকবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

যুব নেতা থুইনুমং মারমা বলেন, আমাদের দেশে এখন দুই শাসন বিদ্যমান। সমতলে এক শাসন আর পার্বত্য চট্টগ্রামে এক শাসন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশন উত্তরণের নামে সেনাশাসন জারি রেখে অন্যায় দমন-পীড়ন, ভূমি বেদখল, নারী ধর্ষণ আর ইসলামিকরন চলছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে যারা নিরাপত্তার নামে নিয়োজিত রয়েছে তাদের কারণে আজ এ অঞ্চলে অশান্তি বিরাজ করছে। রমেল চাকাম আমাদের অসংখ্য সহযোদ্ধা এই রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে খুন-গুম ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।

পিসিপর চট্টগ্রাম মহানগর শাখার নেতা অমিত চাকমা বলেন, পিসিপি কোনো নিছক নাম নয়। পিসিপি মানে জুম্ম জনগণের মুক্তির আন্দোলন প্রথম হাতিয়ার। যেখানে অন্যায়, অত্যাচার, দমন-পীড়ন, ভূমি বেদখল সেখানে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ লড়াই সংগ্রামকে জারি রেখেছে।

তিনি বলেন, বিপুল, সুনীলরা যেভাবে অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে নিবেদিত প্রাণ ছিলেন তাদের সংগ্রামী চেতনাকে সমুন্নত রেখে প্রতিটি ছাত্রের একজন বিপুল, সুনীল হতে হবে।

তিনি আরো বলেন,আমদের পার্বত্য চট্টগ্রামে পিসিপি'র নাম ভাঙানো অনেক সংগঠন দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু প্রকৃত অর্থে কারা পাহাড়ের দুঃখিনী মায়ের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য, পাহাড়ি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে জন্য কাজ করে যাচ্ছে তা আমাদের ছাত্র সমাজের খেয়াল রাখতে হবে।

কাউন্সিল অনুষ্ঠোনের সভাপতি রিপন আলো চাকমা তার বক্তব্যে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়িত জনগণের মুক্তি ও জাতির অস্তিত্ব রক্ষার্থে সকল ছাত্র-যুব-নারী সমাজকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াই সংগ্রামকে বেগবান করতে হবে।

কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে পিসিপির কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক নিকন চাকমা পুরাতন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন এবং তনুময় চাকমাকে সভাপতি ও বারিঝে চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও দিপায়ন চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটির প্রস্তাবনা পেশ করেন।

এরপর উপস্থিত সকলে জোর করতালির মাধ্যমে প্রস্তাবিত নতুন কমিটিকে অনুমোদন দেন এবং স্বাগত জানিয়ে নতুন কমিটির সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। 

পরে নিকন চাকমা নতুন কমিটির সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান।

কাউন্সিলের আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রতিবাদী নৃত্য ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ বিষয়ক নাটিকা পরিবেশন করা হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post