২রা
ডিসেম্বর '৯৭
সরকার
ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে সম্পাদিত
আপোষ
চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে
দেশবাসীর
উদ্দেশ্যে
PGP-PCP-HWF
-এর
জরুরী
বিবৃতি
১৫ই
ডিসেম্বর, ১৯৯৭
ঢাকা
![]() |
| ছবি : ১৫ ই ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে পাহাড়ি গণ পরিষদ. পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বিবৃতি কপি |
প্রিয়
দেশবাসী,
জাতির এক চরম সংকটময় মুহুর্তে আপনারা আমাদের প্রাণতেজোময় সংগ্রামী অভিবাদন গ্রহণ করুন। দেশ আজ নিদারুণ দুর্দশাগ্রস্থ। অধিকার আদায়ের লড়াই সংগ্রাম বিশ্ব বেহায়ার’ চাইতেও জঘন্য লম্পটের খপ্পরে পড়ে চোখের সামনে লন্ড ভন্ড হয়ে যাচ্ছে। ২রা ডিসেম্বর '৯৭ জনসংহতি সমিতির কতিপয় আদর্শচ্যুত নেতা এত বছরের রক্তে গড়া আন্দোলন পানির দরে সরকারের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। জনগণের বুকে ছুড়ি বসিয়ে, আন্দোলন গুটিয়ে ফেলে আওয়ামী নোকায় ঝাঁপ মেরে হাসিনার কোলে ঠাঁই পাবার লাভে এই অধঃপতিত নেতারা এখন দালালদের সাথে দালালীর প্রতিযোগীতায় নেমেছে। দূর্ভাগা জনগণকে তারা সরকারের কাছে বলি দিয়েছে। জাতিকে এভাবে সর্বনাশ করার মতলব নিয়ে '৯৫ সনের আগ থেকেই জেএসএস-এর মধ্যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিলো । ধুদুকছডায় '৯৫ এর ১৫ই জুন প্রকাশ্য জনসভায় সন্তু লারমার চরম প্রতিক্রিয়াশীল বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তার প্রথম বহিঃপ্রকাশ ঘটে। জাতীয় বেঈমান গণদুশমন সমীরণের মধ্যে “দেশপ্রেম” আবিস্কার করে সেদিন তিনি উপস্থিত জনতাকে চমকে দিয়েছিলেন । “গণদুশমন দালালদের বিরুদ্ধে কিছু করা যাবে না, জঙ্গী আন্দোলন করা যাবে না” ইত্যাদি বলে উত্তাল ছাত্র জনতার আন্দোলনকে দাবিয়ে রেখে আপোষের সুগম করেন। সন্তু লারমার এই ধরনের দূরভিসন্ধিমূলক কথাবার্তায় আতঙ্কিত ও ক্ষুদ্ধ জনতা সেদিন থেকেই “জাতীয় আন্দোলনে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা করতে থাকেন।” সেই আশংকা যে আমূলক নয়, তার প্রমাণ সন্তু লারমা নিজেই ২রা ডিসেম্বর আপোষ চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে দিলেন।
এই কান্ড কারখানা করার জন্যই এতদিন ধরে “আত্মত্যাগ করে সন্তু লারমা সমীরণ ও দুই নাম্বারী অর্ধাঙ্গ বে-আক্কেলদের মতো দেশপ্রেমিক (???) সাগরেদ পাবার প্রতীক্ষায় দিন গুনেছিলেন। দালাল পাবার ভাগ্য তার সুপ্রসন্ন ছিলো, তিনি পেয়ে যান বহু নব্য সমীরণ। চরম নীতিহীনতা ও লাম্পট্যকে জায়েজ করার জন্য উদ্ভট উদ্ভট তত্ত্ব যেমন, কারোর দুই বউ থাকলে ব্রিগেডের টাকা খাওয়া যায়" “সমীরণেরও দেশপ্রেম আছে” ইত্যাদি প্রচার করেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বহুল ব্যবহৃত, ক্ষয় হয়ে যাওয়া, উই পোকায় কাটা “জাতীয় ঐকমত্য” তত্ত্ব কুড়িয়ে দিয়ে তা কৃতিত্বের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামে খাটাতে থাকেন। ফলশ্রুতিতে গণদুশমন জাতীয় শত্রুদের সাথে সন্তু লারমার শুরু হয়েছিলো গোপন দূতিয়ালী, নির্লজ্জ মাখামাখি, দৃষ্টিকটু দহরম মহরম ও বহায়াপনা। এতেই তিনি ক্ষান্ত হননি। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন গণতান্ত্রিক সংগঠন সেনাবাহিনী ও প্রশাসনকেও “জাতীয় ঐকমত্যের” ফরমূলায় বেধে ফেলে সাংঘাতিক রকমের কৃতিত্ব(?) প্রদর্শন করেন। পরিণামে খাগড়াছড়ির ২০৩ পদাতিক ব্রিগেডে জন্ম নেয় আজব গোষ্ঠী “মুখোশ বাহিনী”। সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে দিনে দুপুরে ভিতরে-বাহিরের যোগসাজশে সন্ত্রাস অরাজকতা চালিয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত করে তোলে এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। সেনাবাহিনীর এই ভাড়াটে গুন্ডাদের হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে বীরত্বের সাথে শহীদ হন অমর বিকাশ চাকমা এবং পরবর্তীতে ক্যজাই মারমা। ষড়যন্ত্র, লাম্পট্য, নষ্টামী শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। কড়া সেনা প্রহরায় মাইক্রোবাসে চেপে ধুদুকছড়ায় গিয়ে মুখোশ বাহিনীর পান্ডারা অধঃপতিত জেএসএস নেতাদের সাথে দেখা করে টেন্ডার নিয়ে আসতো। তাদেরকে কোন কিছু না করার জন্য অধঃপতিত জে.এস.এস নেতারা ছাত্র-জনতাকে সতর্ক করে দেয়। ক্যান্টনমেন্টে থেকে মুখোশরা শান্তিবাহিনীর অধঃপতিত কমান্ডারদের সাথে সংযোগ রক্ষা করতো। “জাতীয় ঐকমতের সর্বরোগহর অব্যর্থ বটিকা গিলে সেনাবাহিনী ও শান্তিবাহিনী সেজে থাকা কতিপয় সশস্ত্র মাস্তান মিলে পিজিপি-পিসিপি-এইচডব্লিউএফ-এর বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে মাঠে নামে। তিন সংগঠনের নেতা কর্মীদেরকে জব্দ করার জন্য চলতে থাকে একের পর এক ন্যক্কারজনক ষড়যন্ত্র ।
সংগ্রামী
জনতা,
সমস্ত রকমের ষড়যন্ত্র, সরকারী প্রশাসনের মামলা হুলিয়া দালাল প্রতিক্রিয়াশীলসহ সেনা ও মুখোশ বাহিনীর উৎপাত সত্বেও তিন সংগঠনের নেতা কর্মীদেরকে নীতি আদর্শ ও প্রতিজ্ঞা থেকে বিচ্যুত করা যায় নি। একে একে সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়ে তিন সংগঠনের নেতৃত্বে ছাত্র জনতার আন্দোলন অভীষ্ট লক্ষ্যে অগ্রসর হতে থাকে। জনতার অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের সগ্রামী সেনানীরা সরকার দালাল ও সেনাবাহিনীর সকল অস্ত্র একে একে অকেজো করে দেয়। উত্তাল গণ আন্দোলনের ভয়ে বহু মুখোশ ‘পাল’ ছেড়ে চলে যায়। সেনাবাহিনীর সংশ্রব ত্যাগ করে। তিন সংগঠনের সাধারণ ক্ষমার সুযোগ গ্রহণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। কিন্তু মতলববাজ সন্তু লারমার ষড়যন্ত্র আর শেষ হয় না। মুখোশ বাহিনী দিয়ে তিন সংগঠনকে ঘায়েল করার ষড়যন্ত্র মাঠে মারা গেলে, বাইরের আন্দোলন স্তব্ধ করে দেবার জন্য দেদার টাকা খরচ করে সমাজের সকল আবর্জনা ধান্ধবাজ, সুযোগ সন্ধানী, লম্পট-বদমাশ-বখাটেদের কুড়িয়ে নেয় । পিসিপি’র সংগ্রামী ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে ও আন্দোলনে ব্যাঘাত ঘটানোর লক্ষ্যে সংগঠন থেকে বিতাড়িত অকর্মণ্য অপদার্থ বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী দুর্নীতিবাজদের দিয়ে ষড়যন্ত্র আটতে থাকে। ধুদুকছড়ায় প্রতিক্রিয়াশীলদের আনাগোনা বেড়ে যায়। সমাজের ধিকৃত ঘৃণিত ব্যক্তিরা জামাই আদর পেয়ে থাকে। শুরু হয়ে যায় তিন সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার। অশিক্ষিত মুখোশ দিয়ে কার্য উদ্ধার হয় না। তাই আন্দোলনের বিরুদ্ধে গুটি হিসেবে ব্যবহারের জন্য দরকার কিছুটা ‘লেখাপড়া জানা মুখোশ’। কলেজ ভার্সিটির পড়ুয়া ছাত্রদের দিয়ে এ কাজ করাতে পারলে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে সবচেয়ে সুবিধা। পিসিপি-পিজিপি-এইচডব্লিউএফ থেকে ঝড়ে পড়া বিতাড়িত অকর্মণ্য-অপদার্থদের প্রলোভন দেখিয়ে কিনে নিতে পারলে তো কথাই নেই। প্রাক্তন পিসিপি নেতার কার্ডধারী “ঘাটের মরাদের” উচ্ছিষ্টের লোভ দেখিয়ে জোটাতে পারলে জনতাকে বিভ্রান্ত করতে আরো সুবিধা।
জাতিকে সর্বনাশ করার জন্য সন্তু লারমা নিজে মীর জাফরী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে উমিচাঁদ, রায় দুর্লভ, জগত শেৎ, ঘসেটি বেগমদের কোলে তুলে নেয়। আন্দোলন ধ্বংসের নিষ্ঠুর সর্বনাশা খেলার শিকার হয় পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ। ষড়যন্ত্রের সকল আয়োজন সম্পন্ন করে কড়া পুলিশ প্রহরায় ৩০শে জুন ‘৯৭ এক কলংকিত দিনে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের প্রকাশ্য রাজপথে নেমে আসে উমিচাঁদ, রায় দুর্লভদের এ যুগের উত্তরসুরী “মুখোশ বাহিনীর” নতুন সংস্করণ “অর্ধাঙ্গ” বা দুই নাম্বারী গ্রুপ। জনগণকে বিভ্রান্ত করতে এরা তথাকথিত মিছিল সমাবেশে পিসিপি'র ব্যানার ব্যবহার করে। “সরকার যা দেয় তা মেনে নেয়া দরকার। জে.এস.এস যা করছে, ভালো করছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জুম্মোদেরকে সবকিছু দেবে”.... ইত্যাদি প্রলাপ বকে চট্টগ্রামের লোকদের তামাশা দেখায়। মীরজাফরী, দালালী ও লাম্পট্যগিরির পক্ষে জয়ধ্বনি দেয়। প্রকৃত দেশপ্রেমিক সংগ্রামীদের বিরুদ্ধে জঘন্য অপপ্রচার চালায়। সারা পার্বত্য চট্টগ্রামের নির্যাতিত জনতা অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনার সাথে “অর্ধাঙ্গ” দুই নাম্বারীদের এই দৌরাত্ম্য প্রত্যক্ষ করে। দেশপ্রেমিক সংগ্রামী ছাত্র সমাজের সাহসী ঠিকানা পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে আন্দোলনে ব্যাঘাত সৃষ্টির লক্ষ্যে অপতৎপরতা জোরদার হয় । পূর্বের মুখোশ বাহিনীর মতো এই “নতুন মুখোশ অর্ধাঙ্গ-দুই নাম্বারীরাও ষড়যন্ত্রের আস্তানা ধুদুকছড়ায় মাইক্রোবাস স্কুটারে নিয়মিত যাতায়ত করতে থাকে। জেএসএস’র হিট লিস্টভুক্ত বহু দালাল দাগী অপরাধীও বুদুকছড়ায় রকমারী উপঢৌকন নিয়ে “গা রক্ষা তাবিজ” বা আত্মরক্ষার সনদ আদায় করতে যায়। দালালী ও আপোষকামীতার পথ সুগম করার লক্ষ্যে সমস্ত প্রতিক্রিয়াশীল বদমাইশ মিলে জাতীয় বিরোধী ন্যাক্কারজনক ধ্বংসাত্মক কাজ চালাতে থাকে। সমাজ ও জাতিকে রসাতলে নিয়ে আখের গুছিয়ে নেবার ঘণ্য প্রতিযোগিতা চলে। সরকার ও জেএসএস এর মধ্যে গোপন দূতিয়ালী অব্যাহত থাকে। জোর প্রচারণা চালানো হয় এবার হবে সমাধান। আওয়ামী লীগ সরকার আন্তরিক জুম্মোরা অধিকার পাবে। জেএসএস-এর নেতৃত্বের উপর আস্থা রাখতে হবে। আসন্ন চুক্তি নিয়ে কোন প্রশ্ন করা যাবে না। অবশেষে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দেন-দরবারের মধ্য দিয়ে সম্পাদিত হয় আপোষ চুক্তি।
প্রিয়
দেশবাসী,
এই আপোষ চুক্তি করার জন্যই সন্তু লারমা আওয়ামী লীগের সাথে খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউজে প্রথম বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছিলেন “আমি নতুন সরকারের মধ্যে নতুনত্ব দেখতে পাচ্ছি”। তিনি নতুন সরকারের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে ব্যক্তিগত জীবনের নতুনত্ব দেখেছিলেন। তা কি চাকমা ভাষায় ‘চোখে পহর দেখা’ নয়?? সন্তু লারমা দেখেছিলেন নতুনত্ব, কিন্তু জনগণ তাতে দেখেছে অন্ধকার । শেষমেষ থলের বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে। এতদিন ধরে জেএসএস’এর আদর্শচ্যুত কতিপয় নেতা কর্মী জনগণকে ধোঁকা দিয়ে আসছিল। ‘চুক্তিতে আছে একটা কিছু। পত্র-পত্রিকায় চুক্তির ব্যাপারে যা কিছু লেখালিখি হয় তা মিথ্যা। স্বাধিকার বুলেটিন অনর্থক চুক্তির ব্যাপারে অপপ্রচার ছাড়াচ্ছে, স্বাধিকার বয়কট করতে হবে’... ইত্যাদি অপপ্রচার চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে থাকে। কি আছে বাস্তবে এই আপােষ চুক্তিতে ? জেএসএস-এর আদর্শচ্যুত নেতারা জনগণকে কিসের উপর আস্থা-বিশ্বাস রাখতে বলেন ? তারা আছেন কোন মুলুকে ??? এবার দেখা যাক কি আছে এই আপোষ চুক্তিতেঃ
১.
আসলে এই চুক্তি নতুন
বোতলে পূরাতন মদের মতই। দেশের খাদে সংবিধান বিশেষজ্ঞরাই একথা বলছেন। “প্রকৃতপক্ষে, এরশাদের
আমলে ’৮৯ সালে
পাবর্ত্য এলাকায় যে জেলা পরিষদ
গঠন করা হয়েছিল, সেই জেলা পরিষদের মর্মবস্তুতে কিছু সংস্কার সাধন করে একটু ভিন্ন ধরণের জেলা পরিষদের কথা বলা হয়েছে চুক্তিতে। এটা নতুন কোন বিষয় নয়।” [ব্যারিষ্টার
আমিরুল ইসলামের সাক্ষাৎকার, চলতিপত্র, ৮ ডিসেম্বর ১৯৯৭,
পৃষ্ঠাঃ ১৩]
চুক্তি সম্পাদনে সরকার পক্ষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. মহিউদ্দিন আলমগীর নিজেই বিটিভি সাক্ষাৎকারে (৮ ডিসেম্ভর ’৯৭) দেশবাসীর কাছ খোলসা করে বলে ফেলেছেন যে, ’৮৯ সালে প্রণীত জেলা পরিষদের এক্তিয়ারভুক্ত ক্ষমতার বাড়তি কোন কিছুই আঞ্চলিক পরিষদকে দেয়া হয়নি।
২. ’৮৯ এর মতো বর্তমান চুক্তিরও কোন সাংবিধানিক গ্যারান্টি নেই। পরবর্তীতে যে কোন নতুন সরকার এই চুক্তি পর্লামেন্টে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় অথবা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি করে বাতিল করে দিতে পারবে। ইতিমধ্যে বিরোধীদল বিএনপি’র মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া চুক্তি ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্নও তুলছেন। তার জবাবে গেল ৭ ডিসেম্বর ’৯৭ গণভবনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বেফাঁসে আসল কথা বলে ফেলেছেন। আওয়ামী লীগের পর যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তখন তারাই চুক্তির ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে। তা নিয়ে এখন আওয়ামী লীগ ভাববে কেন!!! বাহ্! বাহ্! সাবাস শেখ হাসিনা!!! চুক্তি করেই দায় খালাস! বিটিভিতে চুক্তি সমাধানের দৃশ্য দেখানোর পর আর কোন দায়-দায়িত্ব নেই। সদ্য সম্পাদিত চুক্তির ভবিষ্যত হচ্ছে এ-ই। দীর্ঘ দু’যুগ ধরে এত রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের পর কলমের এক খোঁচায় যেমন তার সাফল্য আওয়ামী লীগের পকেটে চলে গেলো। ভবিষ্যতে নতুন কোন সরকারও একই কায়দায় কলমের এক খোঁচায় তা বাতিল করে কম তার বাহাদুরি দেখাতে পারবে। এভাবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো দলগুলোর পাল্টাপাল্টি খেলায় পাবর্ত্য চট্টগ্রামের জনগণের নাভিশ্বাস উঠছে এবং দুনিয়া থেকে বিলুপ্ত হতে চলেছে।
৩. দীর্ঘ দু’যুগেরও অধিককাল যাবৎ জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতির জন্য যে এত রক্তক্ষয়ী কঠিন আন্দোলন হলো, চুক্তিতে সেই দাবীর প্রতি সরকার নূন্যতম সম্মান প্রদর্শন করেনি। সংবিধানে জাতিসত্ত্বার স্বীকৃতি তো দেয়া হয়নি, অধিকন্তু চুক্তিতে অবমানকর ‘উপজাতি’ শব্দটি বলবৎ রাখা হয়েছে। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামের সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে, দেশের সম্মানিত নাগরিক হিসাবে যথাযথ মর্যাদা দেয়া হয়নি। শেখ মুজিবের আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে বাঙালি করা হয়েছে, শেখ হাসিনার আমলে উপজাতি হিসেবে রাখার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
৪. চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে “উপজাতি অত্যুষিত অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করার” করার” কথা বলা হয়েছে মাত্র। “বিশেষ অঞ্চল” হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। সুচতুর শব্দ চয়নের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে ফাঁকি দেয়া হয়েছে। অথচ পাকিস্তান আমলে ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ অঞ্চলের মর্যাদা অক্ষুন্ন ছিলো।
৫. চুক্তিতে বহিরাগতদের প্রত্যাহার ও বেদখলকৃত ভূমি ফিরিয়ে দেয়ার কথা নেই। যেহেতু পাবর্ত্য চট্টগ্রামে জমি অপ্রতুল, সেকারণে বেদখলকারীদের প্রত্যাহার না করলে প্রকৃত মালিক জমি ফিরে পাবেন না। বহিরাগতদের রেখে, কাগজ কলমে জমির মালিকানা লিখে দিলেও প্রকৃত মালিক দখল নিতে পারবে না। তার জাজ্জ্বল্য প্রমাণ, ত্রিপুরা থেকে প্রত্যাগত শরণার্থীরা। ক্ষমতাসীন সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে দেশে-বিদেশে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে কিছু লোকের কাছ থেকে সস্তা রাজনৈতিক বাহবা কুড়াতে পারলেও, পাহাড়ীদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি। অত্যন্ত সুক্ষভাবে জুম্মোদের উচ্ছেদের বীজ চুক্তিতে লুকিয়ে রয়েছে। ইতিপূর্বে সেনাবাহিনী ও বহিরাগতদের হামলায় জুম্মোরা উচ্ছেদ হয়ে শরণার্থী হয়েছে। তখন দেশে বিদেশে নিন্দার ঝড় উঠেছিল। চুক্তির পর আইনের মারপ্যাচে জুমের জায়গাজমি হারালে তখন আর প্রতিবাদ করার মতো অবস্থা থাকবে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে ধূয়ো তুলে কেউ আর অভিযোগ নিয়ে মাথা ঘামাবে না । তখন ব্যক্তিগত ভাবে জায়গাজমির মকদ্দমা চালাতে জুম্মোদেরকে সর্বশান্ত হতে হবে। ভূমি অধিকারের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন সরকার বিএনপির উত্থানপ ১০ নং অভিযোগের প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলেছে, “দেশের অন্যত্র ভূমি ব্যবস্থাপনায় সরকারের যে কর্তৃত্ব রয়েছে এ ক্ষেত্রেও তাই রয়েছে। কোনরূপ ছাড় দেয়া হয়নি।” (৭ই ডিসেম্বর ’৯৭ গণভবনে সাংবাদিকদের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মত বিনিময়কালে লিখিতভাবে বিলিকৃত সরকারী জবাব)।
৬. চুক্তির ফলে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হচ্ছে না। অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার করার কথা থাকলেও, তার সাথে মারপ্যাঁচ লাগিয়ে শর্ত জুড়ে দেয়া আছে। অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহারের বাধ্যবাধকতা নেই। অধিকন্তু চুক্তির মাধ্যমে পাবর্ত্য চট্টগ্রামে আরো অতিরিক্ত তিনটি (রুম আলিকদম দিঘিনালা ছাড়া তিন জেলা সদরে তিনটা) সেনানিবাসকে বৈধ করা হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি সরকার মা, আলিকদম, দিঘিনালার তিনটি সেনানিবাস ছাড়া সকল সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করতে সম্মত হয়েছিলো। ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ দক্ষতার সাথে জেএসএস’এর সাথে চুক্তি করে বাড়তি অতিরিক্ত তিনটি সেনানিবাস বৈধ করে ফেলেছে। অস্থায়ী ক্যাম্প গুটিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রেও শর্ত জুড়ে দিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। অন্যদিকে জেএসএসকে তল্পিতল্পাসহ সরকারের কাছে আত্মসমর্প করতে হবে।
৭. ত্রিপুরায় আশ্রিত শরণার্থীদেরকে এ যাবৎ “তুরুপের তাস” হিসেবে জেএসএস ব্যবহার করেছে। দেশে প্রত্যাবর্তন করে যদি তারা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকারের কাছ থেকে জায়গা জমি ফিরে না পায়, তাহলে সে ক্ষেত্রে জেএসএস কি ভূমিকা রাখবে তার সুনির্দিনিষ্ট ব্যাখ্যা নেই। অথচ চুক্তিতে “শরণার্থী প্রত্যাবর্তণে---জন সংহতি সমিতির পক্ষ হতে সম্ভব্য সকল রকম সহযোগীতা প্রদান করা হবে” [ঘ.(১)] বলে সরকারকে জেএসএস প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু, সরকার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করলে, জেএসএস শরণার্থীদের জন্য কি করতে পারবে তার উল্লেখ নেই। এখানে স্মরণ করা দরকার, ’৮৬ সালে জেএসএস অনেক জুম্মোাকে অকারণে বসতভিটা ছেড়ে শরণার্থী জীবন বেছে নিতে প্ররোচিত ও বাধ্য হয়েছিল।
৮. জেএসএস’এর নেতা কর্মী ও সংশ্লিষ্টিদের পুনবার্সন ও সুযোগ-সুবিধার নিশ্চয়তা থাকলেও, এ যাবৎ পাবর্ত্য চট্টগ্রামে কলমপতি-লোগাংসহ যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে সে ব্যাপারে শ্বেতপত্র প্রকাশ কিংবা নিহতদের আত্মীয়-স্বজনদের ক্ষতিপূরণ দেবার কথা চুক্তিতে নেই।
৯. শুধুমাত্র জেএসএস’এর নেতা কর্মীদের মামলা ও বিচারের রায় বাতিলের কথা চুক্তিতে রয়েছে। কিন্তু অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জেএসএস’এর বাইরে PGP-PCP-HWF’এর শত শত নেতাকর্মী যে মিথ্যা মামলা ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন সে ব্যাপারে চুক্তিতে কোন কথা নেই। তাহলে এতে কি এটা প্রমাণ হয়ে যায় না যে, জেএসএস আন্দোলন করলেও পাবর্ত্য চট্টগ্রামের গোটা জনগণের ইচ্ছা ও স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করতে ব্যর্থ ?
১০. জনগণের পক্ষে কথা বলে জেএসএস এত বছর ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করলেও, শেষমেষ চুক্তি করে জনগণের “প্রতিনিধিত্ব” করার ‘কার্ড ও ক্ষমতা’ সরকারের মনোনীত আজ্ঞাবাহী ব্যক্তিবর্গ ও ক্ষয়িষ্ণু সামন্তদের হাতে সঁপে দিয়েছে। জনগণকে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। পাবর্ত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হবেন সরকারের মনোনীত আজ্ঞাবাহী ব্যক্তি। মন্ত্রণালয়ে জুম্মোরা সদস্য সংখ্যায় বেশী হলে ও , এই ব্যবস্থায় জুম্মোরা কতটুকু উপকৃত হবেন তা বর্তমান এমপিদের কাজ কারবার দেখলেই বুঝা যায়। তিন জেলার তিন এমপি জুম্মো হয়ে ও, জনগণের কি লাভ হয়েছে ? এই সমীকরণটা মিলালে, পরবর্তী ঘটনা বুঝতে কারোর অসুবিধা হবার কথা নয়। আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বার সবাই পরোক্ষ ভোটে জেলা পরিষদের সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হবেন। ফলে, জনগণের স্বার্থ নয়, জেলা পরিষদের সদস্যদের স্বার্থ রক্ষা তথা ক্ষমতাসীন সরকারের পলিশি বাস্তবায়নের জন্যই আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সদস্যরা ব্যস্ত থাকবেন। এখন যেমন গণদুশমন সমীরণ--জেরীরা যে ভূমিকা রাখছে, সরকারের দ্বারা মনোনীত হয়ে আদর্শচ্যুত জেএসএস নেতারা একই ভূমিকা রাখবে। জনগনের কল্যাণ নয়, ক্ষমতাসীন সরকারের অনুগ্রহ লাভের জন্যই তারা কাজ করবে। নানান প্রলোভন ও টোপ দিয়ে ক্ষমতাসীন সরকার সবসময় আঞ্চলিক পরিষদে নিজের দলের লোকদের জিতিয়ে নেবে। জুম্মো দিয়ে জুম্মোদের শোষণ-নির্যাতন চালাতে পারবে । জিয়া ও এরশাদ আমলে জুম্মোদের মধ্য থেকে উপদেষ্টা-মন্ত্রী নিয়োগ করা হলেও, পাবত্য চট্টগ্রামে নিপীড়ন-নিযার্তন কমেনি।
১১.
জেলা পরিষদের মতো আঞ্চলিক পরিষদেরও সাধারণ প্রশাসন অর্থাৎ ডিসি-এসপি’র
উপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। আঞ্চলিক পরিষদ কেবল ৩য় ও ৪র্থ
শ্রেণীর কর্মচারীদেরই নিয়োগ দিতে পারবে । আঞ্চলিক পরিষদের
উপরে থাকবে মন্ত্রণালয়। কোন ব্যাপারে আঞ্চলিক পরিষদের সাথে সরকারের দ্বি-মত থাকলে, অনুশাসন
(খবরদারী ) জারী করে সরকার প্রশাসন চালাতে পারবে।
১২. পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করে বিরাট কিছু করা হবে বলে যে বাগাড়ম্বর করা হচ্ছে তা আসলে “বর্তমানে যে বিশেষ কার্যাদি বিভাগ (স্পেশাল এফেয়ার্স বিভাগ) রয়েছে- যা বিএনপি শাসন আমলেও পূর্ণ রূপে কর্মরত ছিল তা কার্যত পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য অঞ্চল বিষয়ক একটি কর্ম বিভাগ বা মন্ত্রণালয়।” (৭ই ডিসেম্বর '৯৭, গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময়কালে লিখিতভাবে বিলিকৃত বিএনপি’র উত্থাপিত ৫ নং অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরকারের বক্তব্য)।
১৩.
চুক্তির ফলে পুরোণবস্তী ও বহিরাগত বাঙালীদের
এক করে ফেলা হয়েছে। এতে একদিকে যেমন পুরোণবন্তী বাঙালীদের অবস্থান ও মর্যাদা ক্ষুন্ন
করা হয়েছে। অন্যদিকে, রেশনের উপর নির্ভরশীল বহিরাগত বাঙালীদের সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসনের নিশ্চয়তা দেয়া হয়নি। এতে জিয়া-এরশাদ-খালেদার মতে বর্তমান সরকারও যে তাদেরকে দেশের
সম্মানিত নাগরিক হিসেবে মর্যাদা না নিয়ে, বরং
তাদেরকে “কামানের
গোলা” হিসেবে ব্যাবহার
করতে চায়, তা প্রকাশ পেয়েছে।
তাদেরকে “মানব
ঢাল” বানিয়ে নিষ্ঠুর
খেলা সংঘটিত করার সর্বনাশ মানসিকতা যে সরকারের নীতি
নির্ধারকরা ত্যাগ করতে পারেনি তাই ফুটে উঠেছে।
ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট বহিরাগত বাঙালীদেরকে পাবর্ত্য চট্টগ্রামের বাইরে সুখ ও সম্মানজনক ভাবে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে আর্থিক সাহায্য দেবার প্রস্তাব দেয় সত্ত্বেও, কেন সরকার সে ব্যাপারে মুখ খুলছে না? তাহলে কি ক্ষমতাসীন সরকার একটা ছোট্ট খাঁচায় ঢুকিয়ে দু’টো জনগোষ্ঠির মধ্যে পরস্পর বিদ্বেষ জিইয়ে রেখে, দাঙ্গাহাঙ্গামা বাধিয়ে মানুষ শেষ করে ফেলতে চায় ???
১৪. প্রকৃত প্রস্তাবে, চুক্তির মাধ্যমে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান না করে ৫০ হাজার টাকা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে এত বছরের আন্দোলন কিনে ফেলেছে।
সংগ্রামী
জনতা,
চুক্তিটি জেএসএস ’এর ক এরোর কারোর স্বার্থগত বিবেচনায় বিরাট কিছু হলেও, বাস্তবিক পক্ষে তা পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের বেঁচে থাকা ও অস্তিত্বের জন্য কিছুই নয়। আন্দোলন গুটিয়ে এসে তাদের মধ্যে থেকে সরকারের প্রিয়ভাজনরাই আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান মেম্বার পদে মনোনীত হতে পারবেন এবং আরো নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা পবেন। সন্তু লারমা নিজে আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান মনোনীত হয়ে মন্ত্রী বনে যেতে পারবেন। যদি ও সাধারণ কর্মীরা এককালীন কিছু নগদ টাকা ছাড়া আর কিছু পাবেন না। জেএসএস যা, চুক্তিটিও আসলে তাই । এ থেকে সাধারণ জনগণ, এমন কি জেএসএস এর সাধারণ কর্মীদের বিশেষ কিছু আশা করারও নেই এবং কিছু পাবারও নেই। যারা প্রকৃত ঘটনা না জেনে, না বুঝে, আওয়াজ শুনে চুক্তি নিয়ে আনন্দ মিছিল করছে নাচানাচি করছে সময়ে একদিন তাদের মোহ ভঙ্গ হতে বাধ্য। সাময়িক ও ক্ষণিকের লাভ লোভের মোহে যারা জেএসএস ও সরকারের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে নেয়ার জন্য নীতি আদর্শ বিকিয়ে দিয়ে দালালী ও লাম্পট্যগিরি করছে, জনগণ তাদের ভালোভাবে চেনে। জাতির সংকটময় মহুর্তে ও দুর্দিনে যারা জনগণের বুকে ছুড়ি বসিয়ে স্বার্থ উদ্ধার করে, সেই সমস্ত মনুষ্য আকৃতির নরপশুদের বিরুদ্ধে সংগঠিত হবার সময় এসেছে। সর্বনাশা কাজের বিরুদ্ধে এলাকায় এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তুলে সমাজকে রক্ষা করতে হবে।
সমাজে আজ বদমায়েশ, লম্পট, মনুষ্য অকৃতির নরপশুদের সীমাহীন দৌরাত্ম্য বেড়েছে। পাড়া গ্রামে আগুন লাগলে যেভাবে সংঘবদ্ধ ভাবে আগুন নেভাতে হয়, ধান ক্ষেতে বন্য শুকর নামলে কিংবা মনুষ্য বসতিতে বন্য হাতির পাল তেড়ে আসলে যেভাবে গোটা এলাকাবাসীকে প্রতিরোধের জন্য এগিয়ে যেতে হয়, জাতির দুর্দিনেও আজ সেভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে সর্বনাশা ধ্বংসাত্মক কাজের মোকাবিলা করতে হবে। এই দেশ সমাজ গুটিকতক সুযোগ সন্ধান ধান্ধাবাজ সরকারের সাথে আঁতাতকারী বদমায়েশদের জমিদারী নয়। এই দেশটা জনগণের । এটা রক্ষার দায়িত্বও তাদের। দেশের ব্যাপারে ভালোমন্দ ব্যবস্থা নেবার অধিকার ও একমাত্র জনগণের। জনগণের নাম ভাঙিয়ে সাধারণ মানুষের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার ধৃষ্টতা দেখানোর সমুচিত জবাব দেবার জন্য সাহসী হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
সংগ্রামী
জনতা,
বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামাতে ইসলামী, জাগপা’সহ কতিপয় চরম দক্ষিণপন্থী স্বাধীনতা বিরোধী দলগুলো সরকার-জেএসএস’কে জনতার রুদ্র রোষ থেকে রক্ষা করার জন্য লোকদেখানো বিরোধীতা করে কিছু কর্মসূচী পালন করছে। জনগণকে বিভ্রান্ত করতে সরকারের সাথে সমঝোতা মোতাবেক জঙ্গীপনাও তারা দেখাচ্ছে। আসল সমস্যা ও মূল ব্যাপারকে ঢামাচাপা দেবার উদ্দেশ্যে এই দলগুলো সরকারের সহযোগী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে মাঠে নেমেছে। অবস্থাটা তার এমন পর্যায়ে উন্নত করতে চায় যাতে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে ফাঁকি দিয়ে অত্যন্ত কম দামে আন্দোলনকে কিনে নিতে পারে। এখানে প্রাসঙ্গিকভাবে একটি গল্প যোগ করা দরকার। এক দঙ্গল মস্তান কোন এক বেঁস্তোরায় ঢুকে প্রচুর খাওয়া দাওয়া করে। কিন্তু ঐ বিল দেবার ইচ্ছা বা সামর্থ্য কোনটাই তাদের ছিল না। বিল না দিয়ে বেঁস্তোরা থেকে বেরিয়ে যাবার জন্য তারা ফন্দি আঁটে। ফন্দি মোতাবেক তারা নিজেদের মধ্যে তুমুল ঝগড়া বিবাদ শুরু করে দেয়। বেঁস্তোরার চেয়ার টেবিল ভাঙার উপক্রম করে। রেস্তেরার ভিতর রীতিমত এক রণক্ষেত্র বানিয়ে ফেলে। বেঁস্তোরার ম্যানেজার মাস্তানদের পাতানো ঝগড়ায় হতবিহ্বল হয়ে বলেন, ‘বাবার দোকানে গত করে আমারে বারটা বাজারেন না। বিল দিতে অইবো না। বাইরে যান, ঐহানে যা কার করেন’। মস্তানরা ম্যানেজারের কাছ থেকে ঐ কথাই শুনতে চাচ্ছিল। বিল না নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার কথা বলায় ঝড়ের বেগে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার অভিনয় করে তার বেরিয়ে যায়। কিছুদূর গিয়ে হাসতে হাসতে মস্তানরা বলে, দোস্ত সেগারেট বের কর। অনেক নাটক করলাম। ম্যানেজার গোল্লায় যাক।
পার্বত্য চট্টগ্রামেও জনগণের অধিকার পূরণ না করার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সহ বিরোধী দল নামধারী দলগুলো ঐ মস্তানদের মতো মেকি ঝগড়া ঝাটি করেছে। এতে ভড়কে গিয়ে জেএসএস ঐ হাবা ম্যানেজারের মতো ন্যায্য পাওনার কথা ভুলে যায়। জনগণের অধিকার না করে অযৌক্তিক ছাড় দেয়। বিএনপি’র আমলে দফায় দফায় ১৩ বার বৈঠক করে। ক্ষমতার পাঁচ বছরের মেয়াদ কাটিয়ে বিএনপি জেএসএস-কে কলা দেখিয়ে চলে যায়। এখন আওয়ামী লীগকেও যাতে পাহনের দাবি পূরণ করতে না হয় সে জন্য মেকি বিরোধীতা করে বিএনপি সহযোগিতা দিয়ে। আসলে এ সমস্ত দলগুলাের মূল চরিত্র এক ও অভিন্ন। ক্ষমতায় থাকাকালে তালা যা বক্তব্য দেয় ক্ষমতাচ্যুত হলে তার বিপরীত কথাবার্তা বলে। রাজনীতির মাঠে ডিগবাজী খেয়ে লাম্পট্যের কসরত দেখিয়ে ফায়দা লোটাই হচ্ছে এ সমস্ত দলগুলোর আসল উদ্দেশ্য। দেশ ও জনগণের উন্নতি বিধানের জন্য তাদের কোন দূরদর্শী চিন্তা ভাবনা কিংবা কোন পরিকল্পনাও নেই । কারা কত বেশী জনগণকে ধোঁকা দিতে পারে, জনসভায় মিথ্যা কথা বলতে পারে, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে পারে, দল ত্যাগ করে ক্ষমতার হালুয়া রুটিতে ভাগ বসাতে পারে এই নিরিখেই তাদের নেতা কর্মীদের যোগ্যতার বিচার হয়। এদের কারণেই দেশের মানুষের দুর্দশা বাড়ছে। দেশের কোন উন্নতি হচ্ছে না।
প্রিয়
দেশবাসী,
জেএসএস চুক্তি করে আন্দোলনে তাদের পালা শেষ করেছে। তারপরও, কেন তারা এলাকায় এলাকায় অন্যায়ভাবে জোর-জবরদস্তি করে উচ্চহারে চাঁদা দাবী করছে ??? এত বছর তো আন্দোলন করার কারণেই জনগণ তাদেরকে চাঁদা দিয়েছে, বিভিন্ন সাহায্য সহযোগীতা যুগিয়েছে। এখন তারা আন্দোলন পরিত্যাগ করেছে , অথচ জোর জবরদস্তি করে উচ্চহারে চাঁদা আদায় অব্যাহত রেখেছে। এভাবে চাঁদা নেবার মানেটা কি ? জনগণের কাছ থেকে চাঁদা তোলার কোন অধিকার আর জেএসএস-এর নেই । কারণ তারা আন্দোলনে জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আন্দোলন না করলে জনগণ কেন তাদেরকে শুধু শুধু চাঁদা দেবে ??? ব্যক্তিগত আখের গুছানোর জন্য তো জনগণ কাউকে চাঁদা দিতে বাধ্য নয়। সরকারতো তাদেরকে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ছাড়াও জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা ধার্য করে রেখেছে।
চাঁদা উঠানোর নামে এ কোন জোচ্চুরি, এ কোন অরাজকতা ? আন্দোলন গুটিয়ে ফেলে, চুক্তি সম্পাদন করেও কি তারা জনগণকে একটু শান্তিতে থাকতে দিতে চায় না ? কি পেয়েছে তারা ??? আদর্শচ্যুত জেএসএস সদস্যদের মনে রাখা উচিত জনগণ খেলার ফুটবল নয়। সেনাবাহিনী ও লাথি মারবে, আর জেএসএস’ও লাথি মারবে। জনতাকে নিয়ে খেলা করার দিন শেষ। এখন জনগণের হিসাব নেবার পালা।
বর্তমানে জেএসএস এর আদর্শচ্যুত অংশ ইউপি নির্বাচনেও সন্ত্রাস চালাচ্ছে। জোর জবরদস্তি করে জনগণের প্রার্থীদের প্রার্থীপদ প্রত্যাহারে বাধ্য করে, নিজেদের পছন্দসই প্রার্থী দিয়েছে। ভোট কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দিচ্ছে। এলাকা বিশেষে, নির্বাচনে তাদের মনোনীত প্রার্থীদের বিজয়ী করতে মোটা অংকের চুক্তিও হয়েছে বলে প্রকাশ । এ আবার কোন ধরনের ব্যবসা শুরু হয়েছে ? আন্দোলন না করে কি এভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাবে তারা ? জনগণের ভাষায় তারা কি ‘নলতন্ত্র’ কায়েম করতে চায় ? হুমকি ষড়যন্ত্র এবং জোর জবরদস্তি সত্বেও বেশীর ভাগ এলাকায় জনগণ জেএসএস প্রার্থীদের প্রত্যাখ্যান করেছে। ব্যালটের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে ফ্যাসিবাদী কায়দা কানুন চলবে না।
প্রিয়
দেশবাসী,
ধুদুকছড়ায় জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য দানকালে সন্তু লারমা “আত্মত্যাগের” প্রশ্ন তুলেছেন। কি বুঝাতে চান তাতে তিনি ??? এতদিন ধরে তিনি আন্দোলনে ছিলেন, কাজেই আন্দোলন ধ্বংস করার অধিকারও তার আছে এটাই কি তিনি বুঝাতে চান? এ তো সাংঘাতিক হীন নীচ মানসিকতার পরিচায়ক। কেউ কোন বাড়ী তুলতে পরিশ্রম করেছে, শ্রম দিয়েছে, এই “আত্মত্যাগের” যুক্তিতে তো বাড়ীটিতে আগুন লাগিয়ে দেবার অধিকার তার থাকতে পারে না। উচু উচু দালান তুলতে শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্রম দেয়, তাই বলে কি ঐ দালান ধ্বংস করার অধিকার তাদের থাকে ??? সন্তু লারমা ও তার লেফটেন্যান্টদের স্মরণ করা উচিত, কেবল তারা আত্মত্যাগ করেন নি। কাউখালি হত্যাযজ্ঞে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার বর্গ থেকে শুরু করে গোটা জনগণই বিভিন্ন সময় ত্যাগ স্বীকার করে এসেছেন। নিজের ভাগের অংশটা বাড়ানোর জন্যই কি তিনি এসব ন্যাকামিপনা শুরু করেছেন? আন্দোলনকারীর মানসিকতার স্তর যদি এই হয়ে থাকে, তাহলে সেই আন্দোলনের পরিণতি আজকের মতো না হয়ে পারে না। তিন সংগঠন পিজিপি-পিসিপি-এইচডব্লউএফ নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে কেন অহেতুক আজগুবি ভিত্তিহীন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে- এর মতলবটা কি সন্তু লারমা ? সরকারের সাথে নীতিহীন আপোষের পথ পরিষ্কার করতেই কি এসব হচ্ছে? কেন দুই নাম্বারী অর্ধাঙ্গদেরকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দিয়ে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যাবহার করা হচ্ছে?? কেন জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্র হুয়াঙ বোই ও বা ’তে সন্ত্রাসী গুণ্ডা লেলিয়ে দিয়ে মূল্যবান বইপত্র পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে ??? রাঙ্গামাটির গণ পরিষদ নেতা সচিব চাকমা, ছাত্র পরিষদ নেতা শান্তিদেব চাকমাকে, খাগড়াছড়ি হতে সাবেক পিসিপি নেতা মিন্টু খীসা ও পিসিপি সদস্য সোনতন চাকমাকে কেন অপহরণ করা হয়েছে ? কাউখালির পানছড়িতে সাধারণ জনগণকে কোন যুক্তিতে ও কি কারণে সেনাবাহিনীর কায়দায় বর্বরোচিতভাবে নির্যাতন করা হয়েছে? কি অপরাধ ছিল তাদের? তারা কি আন্দোলন সংগ্রামের জন্য কম আত্মত্যাগ করেছে? এতদিন ধরে চাঁদা দিয়ে, আশ্রয় দিয়ে নিজের মুখের গ্রাস থেকে খাবার জুগিয়ে বুক দিয়ে আগলে রেখেছে কি নিজের মানুষদের কাছ থেকে এভাবে লাঞ্ছনা পাবার জন্য? এভাবে নিগৃহীত হবার জন্য?
সগ্রামী
জনতা,
আজ এ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর জেএসএস এর অধঃপতিত আদর্শচ্যুত নেতাদের কাছে নেই । এযাবৎ তারা সাধারণ কর্মীদেরকে পিজিপি-পিসিপি-এইচডব্লিউএফ এর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তাদেরকে আন্দোলনের পরিবর্তে নীতিহীন আপোষের পথেই পরিচালিত করেছে। এতকাল যাবত মুক্তিকামী সংগ্রামী সাধারণ কর্মীদেরকে নানাভাবে ভুলিয়ে ভালিয়ে রেখেছে। জনগণকে ধোঁকা দিয়ে এসেছে। শেষমেষ গোটা জাতিকে পথে বসিয়েছে। সংগঠন হিসেবে জেএসএস’এর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। ঔষুধের মেয়াদ ফুরালে যেমন আর কার্যকারীতা থাকে না, আজ জেএসএস’এরও সেই একই দশা। তারা জনগণের পক্ষে পাঁচ দফা দাবী সরকারের কাছে পেশ করলেও তা তারা আদায় করতে পারেনি। পেশ করা আর আদায় করা এক জিনিষ নয় । ভবিষ্যতেও আদর্শচ্যুতদের দ্বারা আর কিছুই হবেনা। মৃত ঘোড়াকে শতবার চাবুক মারলেও আর গাড়ী টানতে পারবে না। এই বাস্তব সত্য উপলদ্ধি করে যুযোপযোগী ভূমিকা নেবার জন্য জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগঠিত হতে হবে।
প্রিয়
দেশবাসী,
তিন সংগঠন পাহাড়ী গণ পরিষদ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন ধোঁকাবাজির এই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের জাতিসত্তার স্বীকৃতি পূর্ণস্বায়ত্তশাসন ও ভূমি অধিকার এই চুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হয়নি। সেনাবাহিনী ও বহিরাগত বাঙালিদের প্রত্যাহারের কথা ও চুক্তিতে নেই। ’৮৯ সালের জেলা পরিষদের সাথে এই চুক্তির কোন পার্থক্য নেই। শুধু বাইরের লেভেলটাই পরিবর্তন করা হয়েছে মাত্র। তার গাল ভরা নাম দেয়া হয়েছে পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ। ’৮৯ সালে যা করা হয়েছে, এবারও তাই হলো। এক মুরগীকে দুইবার জবাই করে বাহবা কুড়ানোর নির্লজ্জ বেলেল্লাপনা চলছে। মতলববাজদের যত সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। ধোঁকাবাজির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। সরকার প্রতিক্রিয়াশীল গণদুশমন জাতীয় শত্রুদের সকল ধরনের ষড়যন্ত্র চক্রান্ত ও যাত প্রতিঘাত মোকাবিলা করে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিন সংগঠন লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। চুক্তি নিয়ে যে পাতানো হৈ চৈ নাচ নাচি লাফালাফি চলছে তাতে বিভ্রান্ত হবেন না। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে তিন সংগঠন জনগণের মৌলিক দাবি আঁকড়ে ধরে সমস্ত ঝড় ঝঞ্ঝা মোকাবিলা করে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণের স্বার্থ রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীর মত সদা প্রস্তুত ও জনগণের পাশে রয়েছে। দুর্দিন দুঃসময়ে কেউ যাতে নাশকতামূলক তৎপরতা চালিয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলতে না পারে তার জন্য সজাগ থাকতে হবে। তিন সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে সন্তু লারমার ভাড়াটে মস্তানদের বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আগ্রহী হোন। আসুন জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে পিজিপি-পিসিপি-এইচডব্লিউএফ’এর পতাকাতলে সমবেত হয়ে লড়াই সংগ্রাম জোরদার করি।
* নীতিহীন
আপোষ নয়, লড়াই সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হােন
* জনগণের
ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলবে না, বন্ধ করো
* জনগণের
শত্রুরা, হুঁশিয়ার সাবধান!!
* জনগণের
উপর জোর জবরদস্তি চলবে না, বন্ধ করো
* ষড়যন্ত্রকারী
আদম বেপারীদের কবল থেকে আন্দোলনকে রক্ষা করুন
* সকল
প্রকার অন্যান্য-অনাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান
* পার্বত্য
চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি ও সমাধানের জন্য
এগিয়ে আসুন
* সাম্প্রদায়িকতা
সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান
* দাঙ্গা
বাধানাের পাঁয়তারা প্রতিহত করুন
* পাহাড়ী
বাঙালি সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান
পূর্ণম্বায়ত্তশাসনই পাবর্ত্য চট্টগ্রামের একমাত্র সমাধান
১৫ই ডিসেম্বর, সোমবার, ১৯৯৭ ঢাকা। পাহাড়ী গণ পরিষদ পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ হিল উইমেন্স ফেডারেশন
তিন
সংগঠনের দিচ্ছে ডাক
সুবিধাবাদী আপোষকামীরা নিপাত যাক
আপোষ চুক্তিতে
মুক্তি নাই
আন্দোলন
ছাড়া উপায় নাই
পাহাড়ী
গণ পরিষদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স
ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় প্রচার-প্রকাশনা সমন্বয় দপ্তর থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত।

إرسال تعليق