![]() |
| ছবি: 'ফিলিস্তিন সংহতি দিবস' উপলক্ষে ঢাবি রাজু ভাস্কর্যে সংহতি সমাবেশ করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)। |
ঢাকা প্রতিনিধি: ইসরারায়েল যেভাবে ফিলিস্তিনী বা জনগণের ওপর নিপীড়ন, নির্যাতন চালাচ্ছে ঠিক একই কায়দায় বাংলাদেশ সরকারও পার্বত্য চট্টগ্রামে যুগ যুগ ধরে সেনাশাসন জারি রেখে পাহাড়ি জনগণের ওপর নিপীড়ন, নির্যাতন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতন চালাচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর ২০২৩) বিকাল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যে ‘ফিলিস্তিনী সংহতি দিবস’ উপলক্ষে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) উদ্যোগে আয়োজিত সংহতি সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
তারা ফিলিস্তিন জনগণের ওপর হামলা, নির্যাতন, নিপীড়ন বন্ধ করে ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন দুই রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে চলমান সমস্যার শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানে উপনীত হওয়া প্রযোজন বলে মত প্রকাশ করেন।
‘‘We want a two-state solution for Israeli-Palestinian peace, দুই রাষ্ট্রই ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন সমস্যার একমাত্র সমাধান! We stand with Palestine people!” এই স্লোগানে আয়োজিত সমাবেশে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, সাংগঠনিক সম্পাদক শুভাশীষ চাকমা, তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রোনাল চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি জিকো ত্রিপুরা। সংহতি সমাবেশে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায় প্রমূখ।
সমাবেশ বক্তারা বলেন, ফিলিস্তীন এক সময় স্বাধীন ভূখন্ড ছিল। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ প্রস্তাব অনুযায়ী ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন-আলাদা দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা থাকলেও ইউরোপ, আমেরিকার মতো পরাশক্তির ষড়যন্ত্র এবং সেখানকার মানুষের মধ্যকার বিভক্তি ও দুর্বলতার কারণে এতদিন ‘ফিলিস্তীন’ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গঠিত হয়নি। পরে ব্রিটিশ ও মার্কিন সমর্থনে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিদের জন্য “ইসরায়েল” রাষ্ট্র গঠন করা হলে সমস্যার সৃষ্টি হয়। যা এখন বিশ্ব সমস্যায় রূপ নিয়েছে।
তারা আরো বলেন, ফিলিস্তিনীদের জনগণের জীবন এখন ইসরায়েলী সামরিক দখলের অধীনে জর্জরিত। ফিলিস্তিনী জনগণের ওপর ইসরায়েলের সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রতিনিয়ত নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। অসলো চুক্তিতে স্বাক্ষর করেও ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরে অনুপ্রবেশ বন্ধ করেনি। সম্প্রতি গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ হামাসের পরিকল্পিত এক হামলা চালানোর পর থেকে ইসরায়েল প্রতিশোধমূলকভাবে গাজায় আকাশ থেকে বোমা বর্ষণ ও স্থল হামলা শুরু করে। হাসপাতাল, স্কুল, আশ্রয়কেন্দ্র থেকে শুরু করে কোন কিছুই হামলা থেকে বাদ যায়নি। ইতোমধ্যে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় নারী-শিশুসহ প্রায় ১৫ হাজার মানুষ মারা গেছেন, আহত হয়েছেন আরো অন্তত ৩৬ হাজার মানুষ। হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
বাংলাদেশ সরকারও পার্বত্য চট্টগ্রামকে এক ফিলিস্তিন পরিণত করে রেখেছে অভিযোগ করে বক্তারা বলেন, ইসরায়েল সেনবাহিনী কর্তৃক ফিলিস্তীন জনগণের ওপর যেভাবে নিপীড়ন, নির্যাতন, হত্যা, গুম, বেআইনীভাবে সেটলার অনুপ্রবেশ করিয়ে ভূমি বেদখল করা হচ্ছে, ঠিক তেমনি বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল পার্বত্য চট্টগ্রামেও এ রাষ্ট্রের সরকার স্বাধীনতার পরবর্তী ৫২ বছর ধরে সেনাশাসন জারি রেখে পাহাড়ি জনগণের ওপর দমন-পীড়ন, নির্যাতন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন, অপহরণ, নারী ধর্ষণের এবং বেআইনীভাবে সমতল থেকে সেটলার অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে পাহাড়িদের নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করে ভূমি বেদখল অব্যাহত রেখেছে।
তারা বাংলাদেশ সরকারের দ্বি-চারিতার কথা তুলে ধরে বলেন, সরকার লোক দেখানোর জন্য ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের বেলায় ইসরায়েলের ভূমিকা পালন করে থাকে। ২০১৫ সালে ফিলিস্তীন সংহতি দিবসে খাগড়াছড়িতে পাহাড়ের অধিকারকামী ৮ গণসংগঠনের কনভেনিং কমিটির আয়েজিত ছাত্র-যুব-নারী সংহতি সমাবেশে সেনা-পুলিশের হামলা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের তৎকালীন সভাপতি নিরূপা চাকমা ও সদস্য দ্বিতীয়া চাকমাকে আটক ও কারাগারে প্রেরণের ঘটনা তারই উদাহরণ।
সমাবেশ থেকে বক্তারা, ফিলিস্তিনী জনগণের ওপর নিপীড়ন বন্ধ, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার, বহিরাগত সেটলারদের সমতলে সম্মানজনক পুনর্বাসনসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সমস্যা স্থায়ী সমাধানের লক্ষে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন দাবি মেনে মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।




إرسال تعليق