প্রেস বিজ্ঞপ্তি, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।।
অমর একুশে ফেব্রুয়ারী ও
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা অবিলম্বে বাস্তবায়নের
দাবিতে আজ ১৯ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি শহরে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি
ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখার উদ্যোগে ছাত্র সমাবেশ, মাতৃভাষায় প্রতীকী
ক্লাশ ও র্যালী অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে দেশের সংখ্যালঘু জাতিসমূহের মাতৃভাষায় প্রাথমিক
শিক্ষা চালু করে ভাষা শহীদদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি
জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রতন স্মৃতি চাকমার সভাপতিত্বে সকাল ১১টায় স্বনির্ভর মাঠে
অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)
নেতা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অলকেশ চাকমা ও পাহাড়ি
ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার নেতা জেসীম চাকমা।
বক্তারা বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারী
সালাম, জব্বার, রফিকরা কেবল বাংলা ভাষার জন্য জীবন দেননি। তারা মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার
জন্য সংগ্রাম করেছেন। সেজন্য আজ ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত,
বাংলা ভাষা দিবস হিসেবে নয়। কিন্তু আজ যদি ভাষা আন্দোলনের শহীদরা কবর থেকে উঠে এসে
দেখতেন, যে দেশে তারা মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন সেই দেশের ভিতরে সংখ্যালঘূ
জাতিসমূহের মাতৃভাষার কোন স্বীকৃতি নেই, তাদের ভাষা চরমভাবে উপেক্ষিত ও বিলুপ্তির পথে,
তাহলে তারা বড়ই দুঃখ পেতেন। তাই অন্ততঃ শহীদদের মর্যাদা রক্ষার জন্য হলেও সরকারের উচিত
চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ দেশে বসবাসরত সকল সংখ্যালঘু জাতিসমূহের মাতৃভাষার অধিকার
প্রতিষ্ঠা করা।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম
নাহিদের দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিসমূহের নিজ মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালুর ঘোষণাকে
স্বাগত জানিয়ে তারা আরো বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত এখনো বাস্তবায়ন হয়নি, তা এখনো কথার
কথা থেকে গেছে। আমরা অচিরেই সরকারের এই সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকল সংখ্যালঘু জাতির মাতৃভাষায়
প্রাথমিক শিক্ষা চালুর জন্য বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
নেতৃবৃন্দ শিক্ষামন্ত্রীর
ঘোষণাকে আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয় হিসেবে অভিহিত করে বলেন, আমরা ২০১১ সালে সংখ্যালঘু
জাতিসমূহের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু না হওয়া পর্যন্ত একুশে ফেব্রুয়ারী শহীদ
মিনারে ফুল দেয়া থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছিলাম। তবে শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নের
জন্য সরকারের পক্ষ থেকে দৃষ্টিগ্রাহ্য বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেই আমরা আমাদের উক্ত
ঘোষণা প্রত্যাহার করে পুনরায় শহীদ মিনারে ফুল দেয়া শুরু করবো। আমরা এ প্রসঙ্গে দৃঢ়ভাবে
বলতে চাই যে, একুশে ফেব্রুয়ারীতে শহীদ মিনারে ফুল না দেয়ার ঘোষণা দিয়ে পিসিপি শহীদদের
কোন অমর্যাদা করেনি, বরং তারা যে মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার মহান উদ্দেশ্যে আত্মোৎসর্গ করেছিলেন তার প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে
তাদের প্রতি যথাযথ সম্মানই দেখিয়েছে।
তারা বলেন, আমরা ১৯৯৯ সালে
একুশে ফেব্রুয়ারীকে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা দেওযার পর পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের
পক্ষ থেকে দেশের সংখ্যালঘু জাতিসমূহের নিজ নিজ মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার অধিকারসহ শিক্ষা
সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি সরকারের কাছে পেশ করেছিলাম। আমাদের আন্দোলনের মুখে আওয়ামী সরকার
চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, সান্তাল, গারো ও মুনিপুরি ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু করার
ঘোষণা দেয়। কিন্তু সরকার আমাদের ন্যায্য দাবি মেনে না নিয়ে বরং ২০১১ সালে সংবিধানের
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের সংখ্যালঘু জাতিসমূহের উপর বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়েছে।
তাদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা দূরের কথা, সংবিধানে তাদের স্বতন্ত্র জাতীয়
অস্তিত্বের স্বীকৃতি পর্যন্ত প্রদান করেনি।
বক্তারা অবিলম্বে সকল সংখ্যালঘু
জাতির মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু করে একুশের ভাষা শহীদদের যথার্থ সম্মান জানানোর
জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
নেতৃবৃন্দ রাঙামাটিতে
মেডিক্যাল কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন সম্পর্কে বলেন, আমরাও
চাই পার্বত্য চট্টগ্রামে এ ধরনের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হোক, এটা আমাদের
দাবিও। কিন্তু সরকার যেভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল সমস্যাগুলো আগে সমাধান না করে
রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করছে তাতে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ
লাভবান না হয়ে বরং ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে তাদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রান্তিকীকরণ
প্রক্রিয়া আরো জোরদার হবে।
তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের
মূল সমস্যাগুলোর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এই অঞ্চলে মেডিক্যাল কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করার দাবি জানান।
দেশের বর্তমান অস্থিতিশীল
রাজনৈতিক পরিস্থিতি বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন দুই রাজনৈতিক জোট
দেশকে আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। আওয়ামী লীগের যেন তেন প্রকারে ক্ষমতায়
থাকা এবং বিএনপির সন্ত্রাসের মাধ্যমে হলেও ক্ষমতায় যাওয়ার যে লড়াই এখন চলছে তাতে সাধারণ
মানুষকেই বলির পাঠা বানানো হয়েছে। তারাই দুই জোটের ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পিষ্ট হচ্ছে।
বক্তারা বলেন, আন্দোলনের
নামে বিএনপি জোটের সহিংসতা যেমন নিন্দনীয়, তেমনি সরকারী দলের দমন নীতি ও ফ্যাসিস্ট
নীতিও একইভাবে অগ্রহণযোগ্য। দেশে যতদিন এই দুই জোটের রাজত্ব থাকবে ততদিন শান্তি প্রতিষ্ঠিত
হবে না। দেশকে বাঁচাতে হলে দরকার এই জোটগুলোর বাইরে থাকা প্রকৃত গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল
শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করা।
ছাত্র সমাবেশে আলোচনা শেষে
চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষায় প্রতীকী ক্লাশ অনুষ্ঠিত হয়। ঘন্টা বাজিয়ে ও জাতীয় সঙ্গীত
গেয়ে ক্লাশ শুরু করা হলে উপস্থিত সবাই আগ্রহের সাথে নিজ মাতৃভাষায় পাঠ নেন। ক্লাশে
চাকমা ভাষায় পাঠদান করেন শুভাশীষ চাকমা, মারমা ভাষায় কংজরী মারমা এবং ত্রিপুরা ভাষায়
জগদীশ ত্রিপুরা। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন।
আধা ঘন্টা ক্লাশ চলার পর
একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এতে খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ থেকে
১২ শত ছাত্রছাত্রী অংশ নেয়। মিছিলটি স্বনির্ভর মাঠ থেকে চেঙ্গী স্কোয়ারে যায় এবং সেখানে
একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে পুনরায় স্বনির্ভর মাঠে ফিরে আসে।
বার্তা প্রেরক
সুভাষ চাকমা
তথ্য ও প্রচার সম্পাদক
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)
খাগড়াছড়ি জেলা শাখা।





إرسال تعليق