আজ বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল ২০২৫) বিকাল সাড়ে ৫টায় খাগড়াছড়ি শহর চেঙ্গী স্কোয়ারে '৯২ সালে লোগাঙ গণহত্যা দিবসে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের উদ্যোগ আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
"পার্বত্য চট্টগ্রামকে বধ্যভূমি বানানো যাবে না” শ্লোগানে '৯২ লোগাঙ গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে সমাবেশে পিসিপি’র অনিমেষ চাকমার সঞ্চালনায় ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখা আহ্বায়ক এন্টি চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সভাপতি কণিকা দেওয়ান, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমা ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি'র) সভাপতি অমল ত্রিপুরা।
পার্বত্য চট্টগ্রামকে বধ্যভূমি করার ষড়যন্ত্র চলছে মন্তব্য করে অমল ত্রিপুরা বলেন, অব্যাহত খুন-গুম, সাম্প্রদায়িক হামলা, গণহত্যার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বধ্যভূমি বানানো ষড়যন্ত্র করছে রাষ্ট্রের একটি বিশেষ মহল। তারা ৮০ সালের ২৫ মার্চ কাউখালী কলমপতিতে গণহত্যা করেছিল, ৯২ সালে লোগাঙে গণহত্যা করেছিল এবং ২০২৪ সালে জুলাই অভ্যুত্থানে পর সেপ্টেম্বর ৪ জনকে হত্যা করেছিল। বান্দরবানে বম জাতিসত্তাদের ওপর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পূর্বে পাক বাহিনী ও তাদের দোসররা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর যেভাবে নিপীড়ন, নির্যাতন, গণহত্যা চালিয়েছে, মা-বোনের ওপর নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে একই কায়দায় নব্য পাক বাহিনী ও তাদের দোসররা পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়ন-নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। কাজেই সকলকে এ বিষয়ে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
সমাবেশ থেকে তিনি, লোগাঙ গণহত্যাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল গণহত্যার শ্বেতপত্র প্রকাশপূর্বক বিচারের দাবি জানান। এছাড়া কারাবন্দী নিরপরাধ বম জাতিসত্তাসহ রাজবন্দিদের মুক্তি ও পাহাড়ে নিপীড়ন বন্ধ করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে অন্তর্র্বতী সরকারে প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশে কনিকা দেওয়ান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সরকারের সময়ে যেমন গণহত্যাসহ নানা ঘটনা অব্যাহত ছিল, আজকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে একই অবস্থা বিরাজমান। পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয়নি।
তিনি পাহাড়ে চলমান নিপীড়ন-হয়রানির ঘটনা তুলে ধরে বলেন, অপারেশনের নামে পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনকারী নেতা-কর্মীদের নামে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে, মা-বোনদের হয়রানি করা হচ্ছে, তল্লাশির নামে লুটপাট চালানো হচ্ছে। তিন গত ৭ মার্চ রাঙামাটির কাউখালীতে সেনাবাহিনী-মুখোশরা মিলে গ্রামবাসীদের ঘরবাড়িতে তল্লাশি, মা-বোনদের হয়রানি ও লুটপাটের ঘটনা তুলে ধরেন এবং বলেন এসব ঘটনায় প্রমাণ করে অতীতের সরকারগুলোর সাথে বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কোন পার্থক্য নেই।
নীতি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর উস্কানিতে বহুবার সাম্প্রদায়িক হামলা ও গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে। বর্বরোচিত লোগাঙ গণহত্যা’র ঘটনা সারাবিশ্বে আলোচিত একটি ঘটনা। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সংঘটিত এ ঘটনায় ১২ শ’র অধিক মানুষ হত্যার শিকার হয়। ৭ শতাধিক ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নারীদের ধর্ষণ-নির্যাতন করা হয়। কিন্তু এ ঘটনার সঠিক রিপোর্ট এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
তিনি গত বছর স্বনির্ভরে সেনাবাহিনী কর্তৃক জুনান চাকমা ও রুবেল ত্রিপুরাকে হত্যার ঘটনা তুুলে ধরেন।
এন্টি চাকমা বলেন, পাহাড় এবং সমতলে সংখ্যালঘু জাতিসত্তার উপর হামলা আগের তুলনায় বর্তমানে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। সেনাবাহিনী পাহাড়ে অস্ত্র উদ্ধারের নামে ছাত্র-তরুণদের মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করে হয়রানি করে যাচ্ছে। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারী রেখে শিক্ষার্থীদের চাপের মধ্যে রাখা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, পাহাড়ে অধিকার প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত উদীয়মান নেতৃত্ব ছাত্র-যুব নেতাদের চিন্তিত করে হত্যা করা হচ্ছে। সেনা-সেটলার কর্তৃক পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক হামলা এখনো চলমান রয়েছে। গত বছর ১৯-২০ সেপ্টেম্বরে সেনা-সেটলাররা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পর পর সাম্প্রদায়িক হামলা চালিয়ে চার জনকে হত্যা করে।






إرسال تعليق