বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) এর চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম মহানগর শাখার ১৫তম কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। এতে ১৭ সদস্যের নতুন নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আজ শনিবার (৮ মার্চ ২০২৫) সকাল ১১টায় “আসুন জাতীয় ক্রান্তিলগ্নে ভয়ভীতি,ব্যক্তিস্বার্থ ও সুবিধাবাদী চিন্তা পরিহার করে অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে সামিল হই" স্লোগানে কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়।
ছাত্রনেতা সোহেল চাকমার সভাপতিত্বে ও অংহ্লাচিং মার্মার সঞ্চালনায় কাউন্সিল অধিবেশনে বক্তব্য দেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ভূবন চাকমা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কমিটির অর্থ সম্পাদক পরিমল ত্রিপুরা।
কাউন্সিল অধিবেশন শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্বশাসন আদায়ের লড়াই সংগ্রামে এ যাবৎ আত্মবলিদানকারী সকল শহীদদের স্মরণে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক দেবাশীষ চাকমা। শোক প্রস্তাব পাঠ শেষে শহীদদের সম্মানে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অমল ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল জাতিসত্তার ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে সোচ্চার। ছাত্র ও জনগণের সংগ্রামী চেতনায় আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে যখনই অন্যায় নিপীড়ন হয়, সেসময় নিপীড়িতদের পাশে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রাজপথে থাকে।
তিনি আরো বলেন, ’৭১ পরবর্তী দক্ষিণ পার্বত্য চট্টগ্রামে ৩টি সেনানিবাস স্থাপন করে পুরো পাহাড়ে সামরিকায়ন করা হয়। বর্তমানে একদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভুমিপুত্রদের প্রতিনিয়ত শাসকদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হচ্ছে, অন্যদিকে সেনাদের সহযোগী হয়ে সুবিধাবাদী, দালাল, প্রতিক্রিয়াশীলতার ভুমিকা পালন করছেন, আন্দোলন দমনের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধেও
লড়াই সংগ্রাম করতে হচ্ছে। ’৯৭ সালে লোক দেখানো কাগুজে চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে স্থায়ী সমাধান হয়নি। পাহাড়ে যে রাজনৈতিক সংকট চলছে সেখান থেকে মুক্তি পেতে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের সংগ্রাম জোরদার করতে হবে।
পিসিপি চবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ভুবন চাকমা বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ দীর্ঘ লড়াইয়ের রক্ত পিচ্ছিল পথ অতিক্রম করেছে। সে কণ্টকাকীর্ণ পথ পার হতে গিয়ে বহু সহযোদ্ধা আত্মবলিদান দিয়েছেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পাহাড়ের নিপীড়িত জনতা ভেবেছিল সমতলের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের শাসন কাঠামো পরিবর্তন হবে। কিন্তু সেই মুজিব, জিয়া, এরশাদ ও হাসিনার তাঁবেদার বাহিনী প্রতিনিয়ত পাহাড়ে গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, বাড়িঘরে আগুন, লুটপাটসহ নানা অপরাধ করে যাচ্ছে। রাষ্ট্রযন্ত্র সুকৌশলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার নাম পরিবর্তন করে ইসলামি নামকরণ করছে। দৌর্দন্ড প্রতাবশালী ব্রিটিশ উপনিবেশের পতন হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামেও একদিন জলপাই শাসনের পতন হবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে দেশে অরাজক পরিস্থিতি বিরাজমান রয়েছে। পাহাড়ে এখনো জারি রয়েছে সেনাশাসন। সেজন্য রাজনৈতিক সংগ্রাম জারী রেখে আমাদেরকে দেশের অনান্য নাগরিকের মত বুদ্ধিবৃত্তিক ও মেধা মননশীলতার বাস্তবিক অনুশীলনে উন্নত চিন্তা ও আদর্শিক লড়াকু সৈনিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।
অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা সোহেল চাকমকে সভাপতি হিসেবে পুনঃনির্বাচিত করে এবংঅংহ্লাচিং মারমাকে সাধারণ সম্পাদক ও দেবাশীষ চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট প্রস্তাবিত নতুন কমিটি ঘোষণা করা হলে সভায় উপস্থিত প্রতিনিধিগণ তা করতালি মাধ্যমে গ্রহণ করেন। পরে তিনি পুরাতন কমিটিকে বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়।
পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা নতুন কমিটির সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান।


إرسال تعليق