পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের আপোষহীন লড়াই সংগ্রাম ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলেক্ষে প্রচারিত লিফলেট

 

পিসিপি ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উপলক্ষে প্রচার পত্র

পিসিপি’র ৩৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর ডাক

-----------------------------------------------------

আসুন, বম জাতিসত্তার পাশে দাঁড়াই, নব্বইয়ের চেতনায় সোচ্চার হই!

সরকারপন্থীদের হটিয়ে, দালালি ও লেজুড়বৃত্তির কবল থেকে মুক্ত করি ছাত্রসমাজকে, ফিরিয়ে আনি পিসিপি’র হৃতগৌরব!

 

সংগ্রামী সাথী-বন্ধুগণ, 

বাংলাদেশ স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে উগ্র জাতীয়তায় উন্মত্ত শাসকগোষ্ঠীর শিরমণি শেখ মুজিব পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহকে ‘বাঙালি’ হতে নির্দেশ দেন। পাহাড়ে নির্মাণ করেন সেনানিবাস, মোতায়েন করেন সেনাবাহিনী। জিয়া-এরশাদের সময়ে সেনারা শুরু করে নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন ও একের পর এক হত্যাকাণ্ড। ১৯৮৯ সালের ৪ঠা মে সেনা-সেটলার মিলে সংঘটিত করে নারকীয় লংগদু গণহত্যা। তার প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ হয় পাহাড়ি ছাত্রসমাজ। ২০ মে গঠিত হয় ‘বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ’ যা পিসিপি নামে অধিক পরিচিতি লাভ করে। 

প্রতিষ্ঠার এ স্মরণীয় দিনে আমরা পিসিপি’র বীর শহীদদের সম্মানের সাথে স্মরণ করি। রেড স্যালুট জানাই জাতীয় মুক্তির লড়াইয়ে আত্মবলিদানকারী সকল শহীদদের! দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় সংগঠনের আদর্শ সমুন্নত রাখতে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক জেল-জুলুম ও নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন পিসিপির সেই সব নেতা-কর্মী (সাবেক-বর্তমান), দেশীয়-আন্তর্জাতিক বন্ধুপ্রতিম ছাত্র সংগঠন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্রসমাজ ও প্রবাসে অধ্যয়নরত পাহাড়ি শিক্ষার্থী, শুভাকাক্সক্ষী ও সমর্থকদের জানাই সংগ্রামী অভিবাদন!

বন্ধুগণ,

পিসিপি’র আত্মপ্রকাশ পার্বত্য চট্টগ্রামে লড়াই সংগ্রামে এক যুগান্তকারী ঘটনা। পিসিপি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে পাহাড়ের আন্দোলনে সূচিত হয় এক নতুন অধ্যায়। এরপর ছাত্রসমাজ আর মুখ বুঁজে সেনা-শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়ন সহ্য করেনি। পিসিপি’র ডাকে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং সাধারণ জনগণও রাজপথে বেরিয়ে আসে। এ যেন এক যাদুর কাঠির স্পর্শে রাজকুমারীর ঘুম ভাঙানো! অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে ছাত্র জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ বিক্ষোভ জানায়। অন্যায়ভাবে জারিকৃত ১৪৪ ধারা লংঘন করে, সংগঠিত হয় ঐতিহাসিক লোগাঙ লং মার্চ। মিছিলের পদধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গিরিকন্দর থেকে রাজপথ। সাড়া পড়ে যায় পার্বত্য চট্টগ্রামে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গড়ে উঠতে থাকে পিসিপি’র সংগঠন। তাতে ঘুম হারাম হয়ে যায় সেনা ও শাসকচক্রের, অন্যদিকে জেএসএস শিবিরের আপোষকামী রণক্লান্ত অংশটির কপালেও ভাঁজ পড়ে। আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় পিসিপি। সংগঠনে ভাঙ্গন ধরিয়ে আন্দোলন দুর্বল করতে গোপনে রচিত হয় নীলনক্সা। একদিকে পিসিপি’র সম্ভাবনাময় নেতা-কর্মী-সমর্থকদের স্তব্ধ করে দিতে চলে ভয়-ভীতি প্রদর্শন, মিথ্যা মামলা-হুলিয়া, জেল-জুলুম ও দমন-পীড়ন। অন্যদিকে দুর্বলচিত্ত, আত্মসিদ্ধিপরায়ন, ধান্দাবাজ ও আপোষকামীদের আন্দোলন থেকে বাগিয়ে নিতে দেয়া হয় নানান সুযোগ-সুবিধার প্রলোভন। কিন্তু নব্বইয়ের দশক ছিল ছাত্র আন্দোলনের উত্তাল জোয়ার। দালালি, সুবিধাবাদিতা, আপোষকামিতা আর নীতিহীনতার বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ ছিল সোচ্চার।

১৯৯১ সালের ১৭-১৮ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সেমিনার কক্ষে আহূত তৃতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে পিসিপি’তে প্রতিষ্ঠিত হয় আদর্শিক ধারার নেতৃত্ব। পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র আন্দোলনে এটি ছিল বিরাট মোড় পরিবর্তনের ঘটনা। অল্প সময়ের মধ্যে পিসিপি হয়ে ওঠে যেন এক দুর্ভেদ্য দুর্গ, জাতীয় স্বার্থে তখন প্রত্যেক শিক্ষার্থীই যেন একেক জন অতন্দ্র প্রহরী! আন্দোলনের প্রবল জোয়ারে সুবিধাবাদী প্রতিক্রিয়াশীলদের মাথাচাড়া দিয়ে উঠার অবস্থা ছিল না। রাঙ্গামাটিতে ‘স্বায়ত্তশাসন ডাক’ বিরোধিতা করায় পিসিপি’র প্রথম প্রতিনিধি সম্মেলনে (১৩-১৫ জুন ১৯৯২, বিশ^শান্তি প্যাগোডা, চবি) ছাত্রসমাজ কর্তৃক আপোষকামী সুবিধাবাদী চক্রটি কঠোর সমালোচিত, নিন্দিত ও প্রত্যাখ্যাত হয়। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ও রাঙ্গামাটিতে অধ্যয়নরত ছাত্রীরা ছিল অগ্রণী ও সোচ্চার, এমনকী তারা সুবিধাবাদীদের বয়কটেরও ঘোষণা দেয়। আক্ষরিক অর্থে ছাত্রসমাজে সে সময় তারা অপাংক্তেয়, উপহাস ও বিদ্রুপের পাত্রে পরিণত হয়।

চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত চতুর্থ কেন্দ্রীয় সম্মেলনে (১৩-১৫ জুন ১৯৯৪) সুবিধাবাদী, আপোষকামী ও প্রতিক্রিয়াশীল ধারাটি আবারও ঐক্যবদ্ধ ছাত্রসমাজ কর্তৃক প্রশ্নবানে জর্জড়িত, নিন্দিত ও প্রত্যাখ্যাত হয়। গত্যন্তর না দেখে তারা ধূর্ত শিয়ালের মত গর্তে লুকিয়ে থেকে অন্তর্ঘাতমূলক অপতৎপরতা চালায়। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ সুবিধাবাদী অংশটির সাথে সংযোগ স্থাপিত হয় সন্তু লারমার। পরের বছর একই সময়ে ১৫ জুন ১৯৯৫ সালে ধুধুকছড়ায় ‘জঙ্গী আন্দোলন করে স্বায়ত্তশাসন আদায় হয় না’ বলে সন্তু লারমা প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে উল্টো পথে যাত্রা শুরু করেন। সন্তু লারমার সংকেত পেয়ে আপোষকামী প্রতিক্রিয়াশীলরা গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে। বুক ফুলিয়ে ‘জেএসএস-এর সমর্থক’ ও ‘চুক্তি পক্ষের লোক’ সেজে হুক্কা-হুয়া রব তোলে। সংগঠনের অভ্যন্তরে কোন্দল পাকাতে থাকে। ক্ষোভে ঘৃণায় ছাত্রসমাজে উত্তেজনা দেখা দেয়। ১৯৯৭ সালের ১৭-২০ জুন খাগড়াছড়িতে অনুষ্ঠিত পিসিপি’র ৮ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও কেন্দ্রীয় সম্মেলনে প্রতিবাদী আদর্শিক ধারাটি আবারও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং আপোষকামীদের সংগঠন থেকে বহিঃষ্কার করে। 

৩০ জুন ১৯৯৭ নীলনক্সা অনুযায়ী চট্টগ্রামে পুলিশের কড়া প্রহরায় আপোষকামী সুবিধাবাদী ধারাটি মূল পিসিপি’র বিপরীতে খাড়া করে একটি স্বঘোষিত কমিটি। ছাত্র আন্দোলনে এরা রচনা করে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। পিসিপি’র লড়াই সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়কে যারা “হঠকারী জঙ্গী আন্দোলন” হিসেবে নাকচ করে দেয়ার ধৃষ্টতা দেখায়, তারা কখনই পিসিপি’র উত্তরসূরী হতে পারে না। পিসিপি’র নাম ব্যবহার করার অধিকারও তাদের নেই। জনকণ্ঠ পত্রিকা যথার্থই এদের “সরকারপন্থী” (জনকণ্ঠ ২১ জুন ১৯৯৭) বলে চিহ্নিত করে। ছাত্রসমাজ বিদ্রুপ করে তাদের ‘২ নাম্বারি পিসিপি’ নামে আখ্যা দেয়, সংক্ষেপে ‘২ নাম্বারি’ নামে পরিচিতি লাভ করে। পিসিপি’র নাম ভাঙিয়ে এরাই ‘পার্বত্য চুক্তির’ পক্ষে জয়ধ্বনি দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে দালালি, লেজুড়বৃত্তি ও প্রতিক্রিয়াশীল ধারার প্রতিনিধিত্ব করছে। 

পরিহাসের বিষয় এই, জাতীয় স্বার্থবিরোধী স্পাইয়িং কর্মকাণ্ডের অপরাধে এদের কারোর কারোর পরিবারের সদস্য মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়। এতে তারা ছাত্রজীবনে শান্তিবাহিনীর ঘোর বিরোধী ছিল, এমনকি আন্দোলনও সমর্থন করত না ভাঙ্গনমূলক কথাবার্তা বলত, নানাভাবে বিরোধিতা করত। জেএসএস ও আওয়ামীলীগের গোপন সমঝোতার ফলে তারাই শান্তিবাহিনীর ঘোর সমর্থক বনে যায়। তাদের নীতিহীন লোভ, মাস্তানি ও পেশী শক্তি সন্তু লারমাকে আকৃষ্ট করে। জনতার রোষ থেকে বাঁচতে জাতীয় স্বার্থ বিকিয়ে দেয়া সন্তু লারমা এদের লাঠিয়াল হিসেবে লুফে নিয়েছেন। এ ধারাটিই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘রগকাটা ছাত্র শিবির’ ও ‘হাতুড়ি দিয়ে পেটানো..’ মাস্তানের ভূমিকা পালন করছে, শাসকগোষ্ঠীর ভাড়াটে গুণ্ডা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ছাত্রসমাজের গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামে কালিমা লেপন করেছে! তাদের চিহ্নিত করে প্রতিরোধ ও পরাস্ত করা না গেলে, পাহাড়ে অধিকার আন্দোলন জোরদার হবে না। ছাত্রসমাজ পূর্বের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারবে না। 

সংগ্রামী সাথী ও বন্ধুগণ,

আমরা জানি, আশির দশকে যে পরিস্থিতিতে সেনা শাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ছাত্রসমাজ রাজপথে বেরিয়ে এসে লংগুদু গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করেছিল। আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই যে, বর্তমান পরিস্থিতি তার চাইতেও অনেক বেশি গুরুতর ও ভয়াবহ! পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীদের অস্তিত্ব এবার পুরোপুরি হুমকির সম্মুখীন! শাসকগোষ্ঠী ‘১৯০০ সালের শাসনবিধি’ বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে। চাঞ্চল্যকর কল্পনা চাকমার অপহরণ মামলা খারিজ করে দিয়েছে। তার আগে আরোপ করেছে ‘বাঙালি জাতীয়তা’। রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের গোপন চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে!

সাম্প্রতিক কালে তথাকথিত ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুট ঘটনা কেন্দ্র করে বান্দরবানের রুমা-থানচিতে যৌথবাহিনী সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। বম জাতিসত্তার লোকজনকে নির্বিচারে ধরপাকড়, ৩ জনকে হত্যা ও অজ্ঞাত সংখ্যক গুম করায়, ভয়ে-আতঙ্কে তারা গৃহহারা বাস্তুভিটা-এলাকাছাড়া। মানবেতন জীবন যাপন করছে বম জাতিসত্তার লোকজন। ত্রিপুরা ও অন্য জাতিসত্তাও রেহাই পাচ্ছে না। বৈসাবি উৎসবের প্রাক্কালে রুমা-থানচিতে ৫ কেজির অধিক চাল ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়ে বিধি-নিষেধ আরোপের ফলে সেখানে লোকজন এক দুর্বিষহ জীবন অতিবাহিত করছে। 

বলতে গেলে, সারা পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে চলছে অবর্ণনীয় অত্যাচার। পাহাড়িদের নিজ বাস্তুভিটা থেকে বিতাড়িত করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। ধর্মান্তর প্রক্রিয়া আশঙ্কাজনক রূপ নিয়েছে। সেনা ক্যাম্প নির্মাণ-সম্প্রসারণ, ভূমি বেদখল, বান্দরবানের লামা-নাক্ষ্যংছড়ি-থানচি খাগড়াছড়ির মহালছড়ি-দীঘিনালা-রামগড়ে উচ্ছেদ অভিযান, উন্নয়নের মেগা প্রজেক্টের আওতায় পাহাড়-প্রাণ-প্রকৃতির ক্ষতিসাধন ও উৎপাদিত ধান-হলুদ-আদা, ক্ষেত-শস্যফলাদি বাগান ধ্বংস করে বরকল-বিলাইছড়িতে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ-গ্রামবাসী উচ্ছেদ অভিযান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ দখল করে বাণিজ্যেক উদ্দেশ্যে বিজিবি কর্তৃক রেস্টুরেন্ট নির্মাণ (জনগণের তীব্র চাপের মূখে পরে তা ভেঙ্গে ফেলা হয়)। কাচলঙে সুপরিচিত বাপ-দাদাদের নামের বদল ঘটিয়ে এনামুল টিলা-মাহমুদ টিলা সাইনবোর্ড স্থাপন করে ইসলামাইজেশন, চিম্বুকে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ, সাজেকের রুইলুই পাহাড়ে সুইমিংপুল নির্মাণ (যা পরে স্থগিত হয়)। নারী নির্যাতন ও ভূমি বেদখল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। মোটকথা, পাহাড়িদের অস্তিত্ব ধ্বংস করার সকল প্রস্তুতি নিয়ে শাসকগোষ্ঠী ঝাঁপিয়ে পড়েছে!

সাথী বন্ধুগণ, এখনই তো ছাত্র-যুবসমাজের ঐক্যবদ্ধ হবার সময়। সমুদ্র তরঙ্গের মতো ফুঁসে উঠে ’৮৯-এর চেতনায় গর্জে ওঠার কথা! উদ্যত রক্তচক্ষু ও রাইফেল-বেয়নেট উপেক্ষা করে দমন-পীড়নের প্রতিবাদে বেরিয়ে আসার সময়। রাজপথ প্রকম্পিত করে শাসকগোষ্ঠীর ধ্বংসজ্ঞের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, বর্তমান সময়ে ছাত্রসমাজের আশু জরুরি কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে! অথচ দুঃখজনক হলেও সেভাবে পারছে না ছাত্রসমাজ। নীলনক্সা মাফিক ছাত্রসমাজকে বিভ্রান্ত, খণ্ড-বিখণ্ড ও নেশাগ্রস্ত ও নীতিভ্রষ্ট করে রাখা হয়েছে। 

আমরা অত্যন্ত বেদনার সাথে লক্ষ্য করি, জাতির দুঃসময়ে যারা নির্বিকার, গণহত্যা ও ঘর পোড়ার গন্ধ শুঁকে সময় পার করে, ন্যুনতম প্রতিবাদ বিক্ষোভ জানাতে দেখা যায় না। পাহাড়ে ভূমি বেদখল, সম্ভ্রম হারানো মা বোনের বিচারের দাবির বেলায় নানা গড়িমসি করে। লোকদেখানো তৎপরতা দেখিয়ে যারা দায়িত্ব শেষ করে, সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও নিরুৎসাহিত করে, তাদের প্রতিবাদে বাধা দেয়। কিন্তু তারা উতলা হয়ে ওঠে ‘২ ডিসেম্বর’, ‘৯ আগস্ট’ ঘনিয়ে এলে!!! সুন্দরবন তারকা হোটেল, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত অডিটোরিয়ামে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেচে-গেয়ে কত বাহারি অনুষ্ঠানে... তারা স্ফূর্তি করে মাতোয়ারা হয়। অন্য সময় ‘ক্রীড়ানুষ্ঠান’ ‘টুর্নামেন্ট’ ‘হরেক রকমের মেলা’ খাওয়া-দাওয়া আয়োজন করে সময় পার করে। তাদের সাথে তখন জুটে বসন্তের কোকিলসদৃশ শাসকগোষ্ঠীর কিছু কুশীলব। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একশ্রেণীর মিডিয়াও তা গুরুত্বের সাথে প্রচার করে, সুকৌশলে চেপে যায় লড়াই সংগ্রামের সংবাদ।

‘মুলা সদৃশ্য পার্বত্য চুক্তি’র পেছনে দৌঁড়িয়ে এরা সময় ক্ষেপণ করে চলেছে! জনগণের দুঃসময়ে প্রতিবাদ জানানোর সময় তাদের টিকিটিরও দেখা মেলে না। 

অন্যদিকে যারা বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত করতে নিয়োজিত, তাদের ‘হাত পা ভেঙে গুড়িয়ে দিতে...’ তারা মরিয়া। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে ১১ মে হামলা চালিয়ে পিসিপি নেতা রোনাল-শামিনকে জখম করে তার প্রমাণও দিয়েছে। সজাতির ভাইদের খুন-জখম করতে তারা একেক জন রাজাকার-আল বদরের মতো, হিংস্র, নির্লজ্জ ও হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য! ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে জড়াতে মালকোচা মেরে অশিক্ষিত গোঁয়ার গোবিন্দের মতো অগ্রসর হয়। ‘সরকার-প্রশাসন হাতে আছে’ বলেও তারা বাহাদুরি দেখায়, নবীন শিক্ষার্থীদের পাঠ অসমাপ্ত অবস্থায় ভার্সিটি থেকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়ার হুমকিও দেয়। অন্যদিকে চুক্তির পক্ষের সরকারপন্থী আরেকটি গোষ্ঠী “আমাদের কোন ভয় নেই, সেনা-প্রশাসন আমাদের’’ বলে খাগড়াছড়ি কলেজে শিক্ষার্থীদের নিকট নির্লজ্জভাবে বলে বেড়ায় এবং হুমকি দেয়, ‘‘তোমরা (পূর্ণস্বায়ত্তশাসনপন্থী) সরকারের বিরুদ্ধে মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করলে কিংবা পিসিপিতে যুক্ত হলে তোমাদের মেরে ফেলা হবে, মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানো হবে” ইত্যাদি। পাহাড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কড়া নজরদারির সমানতালে সেনা-গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ এভাবে ছাত্রবেশী দালাল মাস্তান নিযুক্ত রেখেছে। সেনা গোয়েন্দারা ছাত্রদের বুঝাতে চায় ‘ছাত্রনং, অধ্যয়নং তপঃ’। অর্থাৎ মিটিং মিছিল, সমাবেশ করা ছাত্রদের কাজ নয়, পড়াশুনা শেষে চাকুরি জুটিয়ে সরকারের সেবা ও দাসত্ব করাই তাদের কাজ। অন্যায় নিপীড়নের বিরুদ্ধে মিটিং-মিছিল, সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সরকারপন্থী ছাত্রবেশী মাস্তান গুণ্ডা দিয়ে অপহরণ, শারীরিক-নির্যাতন,  হুমকি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারপন্থীদের নিয়ন্ত্রিত স্কুল কলেজ ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন প্রতিবাদ বিক্ষোভ নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তাদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না।

পাহাড়ে সেনা-বিজিবি গোয়েন্দারা প্রায় সময়ই দেয়াল লিখন মুছে দেয়, ফেস্টুন-ব্যানার নামিয়ে ফেলে পোস্টার ছিঁড়ে দেয় এবং দোকানপাটের মালিকদের মারধর করে থাকে। দেখা যাচ্ছে, বিশ^বিদ্যালয়সমূহে সরকারপন্থীরাই সে কাজ বাস্তবায়ন করে চলেছে। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে ১৫ মে রাতে পিসিপি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পোস্টারিং শেষে ফেরার পথে সুদর্শন চাকমার ওপর হামলা, একই দিন রাতে ঢাকায় মিরপুরে এক পিসিপির সমর্থকের ওপর সরকারপন্থী দু’টি গোষ্ঠীর হামলা... বিভিন্ন জায়গায় প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে এভাবে বাধা আসছে এবং পিসিপি কর্মী-সমর্থকরা আক্রান্ত হচ্ছে। 

গত বছর ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সামনে পিসিপি ঢাকা শাখার দেয়াল লিখন সরকারপন্থীরা মুছে ফেলতে হামলা চালায়। গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের হস্তক্ষেপে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। ২০১৩ সালে পিসিপি’র দুই যুগপূর্তির পোস্টারিং-এর সময় চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে সরকারপন্থীরা তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি সিমন চাকমাসহ ৬জনকে গুরুতর জখম করে। এখানে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করতে সরকারপন্থীদের দ্বারা সংঘটিত কয়েকটি ঘটনা মাত্র উল্লেখ করা হলো।

সংগ্রামী বন্ধুগণ,

ঔপনিবেশিক কূটচাল ‘Divide and Rule’ (ভাগ করে শাসন)-এর স্থলে বর্তমানে প্রয়োগ হচ্ছে ‘Divide, Corrupt and Finish’.. ‘বিভক্ত, নীতিভ্রষ্ট এবং বিনাশ করা’। আন্দোলনকারীদের নীতিভ্রষ্ট কলুষিত করা না গেলে, অন্যায় শাসন-শোষণ টিকিয়ে রাখা যায় না। নানা সুযোগ-সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে বশীভূত করে রাখার সমস্ত রকমের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থা। পরিণামে পাহাড়িদের চরিত্র কলুষিত হয়ে পড়েছে। এখন ছাত্রসমাজের একটি অংশ আতঙ্কজনকভাবে লোভী-স্বার্থপর, নীতিভ্রষ্ট ও নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার টোপ গিলে ছাত্রবেশী দুর্বৃত্তরা জাতীয় স্বার্থবিরোধী ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত রয়েছে।

জাতি বিনাশের ভয়াবহ নীলনক্সা বাস্তবায়নে অতীতে বিভিন্ন সময়ে সেনা গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ তথাকথিত গপ্রবাহিনী (গণপ্রতিরোধ বাহিনী), লায়ন বাহিনী, টাইগার বাহিনী ও মুখোশ বাহিনী (তথাকথিত পিপিএসসি) মাঠে নামায়। গাঁজা, ফেনসিডিল ও হিরোইন ছড়িয়ে দেয়। বর্তমানে ছড়িয়ে দিচ্ছে ইয়াবা, ইন্টারনেটে জুয়া ও পর্যটনের মাধ্যমে নানা অপকর্ম। তার সাথে যুক্ত হয়েছে ‘পার্বত্য চুক্তি’, যেটি আসলে ‘একটি মুলা’। রাঙ্গামাটির এসপি তা বেফাঁসে বলেছেন। মুলার লোভে গাধা দৌঁড়ায়। মুলা ঝুলে থাকে গাধার নাক বরাবর, গাধা তার নাগাল পায় না। পাহাড়েও মুলা সদৃশ্য ‘পার্বত্য চুক্তির’ পেছনে ২৬ বছর দৌঁড় দিয়েও কোন ফল নেই।

পাহাড়ে সরকারের ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রধান সহযোগী হলেন সন্তু লারমা। তাকে বলা হয় সবচে’ “বড় বিভেদপন্থী”। ১৯৮২ সালে তিনি শান্তি বাহিনীতে ভাঙ্গন ধরিয়েছেন, ১৯৯৭ সালে পিসিপি’র অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব বাধাতে সরকারপন্থী সৃষ্টি করেছেন। তার পূর্বে জেএসএস-এর অঙ্গ সংগঠন ‘প্রবাসী পাহাড়ি ছাত্র সমিতি’কে বনসাঁই বানিয়ে রাখেন, সংগঠনটি পার্বত্য চট্টগ্রামে দমন-পীড়নের প্রতিবাদে কোন ভূমিকাই রাখতে সক্ষম হয় নি। ছাত্রসমাজে এ সাইনবোর্ড সর্বস্ব সংগঠনের কোন প্রভাবও ছিল না। দেশ-বিদেশে পরিচিত লড়াকু সংগঠন পিসিপি’র ইমেজ কাজে লাগাতে ষড়যন্ত্রের হোতা সন্তু লারমা ‘দুই নাম্বারি পিসিপি’ গঠন করে মাঠে নামান। এরাই চুক্তির পক্ষে জয়ধ্বনি দেয়। ২০১০ সালে জেএসএস আবারও সন্তু গ্রুপ আর লারমা গ্রুপে বিভক্ত হয়। 

সংগ্রামী সহযোদ্ধাগণ,

সরকারপন্থী, ষড়যন্ত্রকারী দালাল ও হানাদার সেনাদের উদ্দেশ্যে আমরা সুস্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই, ‘বিপ্লব স্পন্দিত বুকে’ আমরা কোন কিছু পরোয়া করি না! জেল-জুলুম মামলা-হুলিয়া কিংবা রাইফেল তাক করে আমাদের মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই! সাজেক-কাচলঙে ১৫ মে আমাদের তেজস্বিনী বোনেরা আবারও তার প্রমাণ দিয়েছে! ‘১৯০০ সালের বিধি’ বাতিলের ষড়যন্ত্র রুখতে ইউপিডিএফ-এর আহূত অবরোধ সফল করতে প্রতিবাদী নারীরা লাঠি হাতে রাজপথে নেমে আসে, তারা তোয়াক্কা করেনি সেনাদের উদ্যত রাইফেল! পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের চেতনায় উদ্দীপ্ত তারাই কল্পনা চাকমার উত্তরসূরী! 


নব্বইয়ের দশকে উত্তাল সংগ্রামের দিনগুলোতে রাইফেলের গুলিতে শহীদ রূপন-নিতিশ-ক্যজাইয়ের বীরত্বপূর্ণ আত্মবলিদান আমাদের প্রেরণার উৎস। এ পর্যন্ত বিশ জনের অধিক পিসিপি’র সম্ভাবনাময় নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছে। অধিকারহীন মানবেতর জীবনের চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয়। এখনও পিসিপি’র সহ-সভাপতি কুনেন্টু চাকমা অন্যায়ভাবে দীর্ঘ ৫ বছর কারাগারে অন্তরীণ রয়েছে, জামিন পেয়েও জেল গেইট থেকে তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে পুনরায় গ্রেফতার করা হয়েছে। অতীতে বিভিন্ন সময়ে পিসিপি’র নেতা-কর্মীরা জেল খেটেছে। শতাধিক নেতা-কর্মীর নামে মিথ্যা মামলা ঝুলছে। 


সংগ্রামী ছাত্র বন্ধুগণ, 

গোটা দুনিয়া জুড়ে রাজনৈতিক মেরুকরণ হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ অন্যায় আগ্রাসী যুদ্ধের বিরোধিতা করে রাজপথে নামছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইয়েলের নিপীড়নের কবল থেকে মুক্ত হতে ফিলিস্তিনের জনগণের সংগ্রাম বিশ^ব্যাপী জোরদার হয়েছে। ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইয়েলের হামলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছে। এ আন্দোলন ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়ছে। ভিয়েতনামে মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যেভাবে ছাত্রসমাজ প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল, এবারও তাই দেখা যাচ্ছে। 


পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা যায়, অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ সর্বাগ্রে প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করে থাকে। পাকিস্তান আমলে পূর্ব বাংলায় ছাত্রসমাজ শাসকগোষ্ঠীর দোসর মোনেম খানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। পাকিস্তানপন্থী এনএসএফদের প্রতিহত করেছিল। নব্বইয়ের দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে এরশাদের মদদপুষ্ট ‘নতুন বাংলা ছাত্রসমাজ’ নামধারী লাঠিয়াল বাহিনীকে প্রতিহত করে আন্দোলন এগিয়েছিল।

পার্বত্য চট্টগ্রামেও সরকার সেনাবাহিনীর অন্যায় দমন-পীড়ন ছাত্রসমাজ মুখ বুঝে সহ্য করেনি। পাহাড়ের অতীত ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ করলে তার প্রমাণ মেলে। গেল ১৩ ডিসেম্বর শহীদ বিপুল-সুনীল-লিটন-রুহিনের মরদেহ নিয়ে কয়েক শত শিক্ষার্থী ও পিসিপি’র কর্মী স্বনির্ভর বাজার থেকে সারা রাস্তা শ্লোগান দিতে দিতে পানছড়ি ছুটে যায়। লাশবাহী গাড়ির বহর পানছড়ি সেনা জোন সম্মুখ দিয়ে যাবার সময় মিছিলকারীরা ‘সেনা শাসন প্রত্যাহার’ ‘মুখোশ বাহিনীর’ মদদদাতাদের হুঁশিয়ার সাবধান’সহ অনেক জঙ্গী শ্লোগান দেয়। ১৯৯৩ সালের ৩০ অক্টোবর নারাঙহিয়ায় পিসিপি’র নেতৃত্বে ছাত্র-জনতা পুলিশের হামলা প্রতিরোধ করে। অন্যায়ভাবে আটক কর্মীদের মুক্ত করে আনলে উপস্থিত জনতা নারাঙহিয়া মোড়কে রেডস্কোয়ার হিসেবে ঘোষণা দেয়। পিসিপি’র আন্দোলনের ফলে এভাবে রচিত হয়েছে কতিপয় গৌরবোজ্জ্বল স্মরণীয় দিন ।

সংগ্রামী বন্ধুগণ

রক্তে লেখা ‘২০ মে’-এর মূল চেতনা নস্যাৎ করে দেয়ার আয়োজন দেখলে আমরা শান্ত থাকতে পারি না! ক্ষোভে ঘৃণায় গা জ¦লে ওঠে, যখন দেখি পিসিপি’র নাম ভাঙিয়ে সরকারপন্থীরা চক্রটি লেজ কাটা শিয়ালের মত ছাত্রসমাজকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে। শাসকগোষ্ঠীর লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মূল পিসিপি’র বাইরেও আরও তিন গোষ্ঠী পিসিপি’র ব্যানার টানাটানি করছে, যা দৃষ্টিকটু নিন্দনীয়। তারা সবাই চুক্তির পক্ষের ও সরকারপন্থী। তাদের শেকড় এক জায়গায়, সুরও এক।

১৯৯২ সালে পিসিপি’র তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাঙ্গামাটিতে ‘স্বায়ত্তশাসন ডাক’ ছিল সাহসী ও অগ্রসর দাবি। তার বিরোধিতাকারীরা ছিল চিন্তাচেতনায় পশ্চাৎপদ ও সবচে’ প্রতিক্রিয়াশীল এবং ছাত্রসমাজ কর্তৃক তারা নিন্দিত ও প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। ১৯৯৭ সালের ১০ মার্চ ‘পূর্ণস্বায়ত্তশাসন ডাক’ হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে এযাবৎ কালে সবচে’ অগ্রসর রাজনৈতিক দাবি। যারাই ‘পূর্ণস্বায়ত্তশাসন’ দাবির বিপক্ষে দাঁড়াবে, তারা প্রতিক্রিয়াশীল হিসেবে পরিগণিত হয়ে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। বর্তমান সময়ে ‘পূর্ণস্বায়ত্তশাসন’ই প্রগতিশীলতার প্রতীক।

৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আসুন, 

আওয়াজ তুলন,

পিসিপি’র নাম ভাঙিয়ে গুণ্ডামি মাস্তানি বরদাস্ত করবো না!

রক্তে লেখা ‘২০ মে’ চেতনা কলুষিত করতে দেবো না!

ছাত্রসমাজ জেগে ওঠো, স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের মশাল উর্ধ্বে তুলে ধরো!

সরকারের লেজুড় দালাল ছাত্রবেশী চরদের বয়কট করো!

বিশে^র ছাত্র আন্দোলনের দিকে তাকাও, ছাত্র হিসেবে অকর্মণ্য হয়ে বসে থেকো না।

সার্টিফিকেট-এর চাইতে বাস্তুভিটা-অস্তিত্ব রক্ষাই প্রধান ও জরুরি!


আমাদের দাবি, 

১। ১৯০০ সালের শাসনবিধি বাতিলের চক্রান্ত বন্ধ কর, করতে হবে।

২। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন প্রত্যাহার কর, পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবি মেনে নাও!

৩। পাহাড়-সমতলে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ কর!

৪। বান্দরবানে যৌথ অভিযানের নামে নিরীহ বম জাতিসত্তার লোকদের গণগ্রেফতার ও হত্যা বন্ধ কর!

৫। সাধারণ বমদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার কর, আটকদের নিঃশর্ত মুক্তি দাও!

৬। সেনা মদদপুষ্ট নব্য মুখোশ বাহিনী ভেঙ্গে দাও!

৭। ছাত্র-যুব নেতা বিপুল-সুনীল-লিটন-রুহিনের চিহ্নিত খুনীদের গ্রেফতার ও বিচার কর!

৮। পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গোয়েন্দা নজরদারী বন্ধ কর!

৯। কল্পনা চাকমা অপহরণের মামলা খারিজ নয়, পুনঃ তদন্ত করে চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের গ্রেফতার করতে হবে।

১০।  প্রাকৃতিক বন, পরিবেশ ধ্বংস করে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ বন্ধ কর!

১১। পিসিপি’র শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি পূর্ণবাস্তবায়ন কর!


২০ মে ২০২৪


বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)

বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত ও প্রচারিত। ২০ মে ২০২৪


Post a Comment

أحدث أقدم